২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,রাত ১:৫৭

দুদকের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে স্লুইস গেটের কাজ দেয়ার পয়তারা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দুদকের তালিকাভুক্ত ও পতিত হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোংকে স্লুইস গেটের কাজ দেয়ার সকল প্রস্তুতি করা হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১এর নির্বাহি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। চলতি সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ দেয়া হবে বলে ওই ঠিকাদারকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। অথচ এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পতিত সরকারের আমলে ২০২৪ সালের মে মাসে সাতক্ষীরা ডিভিশন-২ এর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে স্লুইস গেটের কাজ করাকালিন দুদকের অভিযানে অনিয়ম হাতে নাতে ধরা পড়ে। মামলা ও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।

এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবারও ডিভিশন-১ এর অধীনস্থ তিনটি স্লুইস গেটের কাজ চুড়ান্তভাবে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি জানা জানি হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কীভাবে পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (দুদকে কালো তালিকাভুক্ত ) কাজ পেতে যাচ্ছে তা নিয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অতীতে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পতিত সরকারের এক প্রতিমন্ত্রীর আর্শীবাদ নিয়ে ঘুষ প্যাকেজের মাধ্যমে শত কোটি টাকার কাজের সুবিধা পেয়েছে। তারা হাসিনা সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পানি ভবনে সুপরিচিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও লাভ হতো না। তাই স্লুইস গেট নির্মাণে সাগর চুরির ঘটনা ঘটলেও পার পেয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান নির্বাহি প্রকৌশলী একই পথ অনুসরণ করে দুদকের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোংকে চূড়ান্ত কার্যাদেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ বিতর্কিত এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্লুইস গেট নির্মাণে স্থায়িত্ব ঠিক রাখতে মাটির ২০ ফিট গভীর থেকে শিট পাইলিং করার কথা থাকলেও সেটি না করে মাত্র ১০ ফিট করা হয়। দুদক দ্বারা জব্দকৃত সেই সিট পাইলগুলি বর্তমানে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস বাউন্ডারির ভিতর আমিন এন্ড কোং এর বিরুদ্ধে দুদকের চলমান মামলা জব্দকৃত আলামত হিসেবে সংরক্ষিত আছে।

উল্লেখ্য যে সোমবার (২০ মে ২০২৪ সালে) দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ দন্ডবিদির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, খুলনার মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমিন, যার নামে বর্তমান সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাতক্ষীরায় নতুন করে ৩ টি সুইজ গেট এর কাজ দিচ্ছে, যেটা সরকারি নীতিমালা PPR ২০০৮ এর চুড়ান্ত লংঘনও বটে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাতক্ষীরা উপ-বিভাগ-২ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ অফিসের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাকারিয়া ফেরদৌস এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনি দাস।

অভিযোগের সূত্র ধরে দুদকের অ্যানফোর্সমেন্ট টিম আঁটসাঁট বেঁধে মাঠে নামে। সেখানে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে পুকুর চুরির সব প্রমাণ। এরপর ঘটনাস্থল থেকে ফিরে দুদক এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালককে চিঠি দেয়। এছাড়া দুদক তার আইনবলে পৃথক মামলাও করে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছিল চলতি বছর মে মাসে পতিত হাসিনা সরকারের আমলে। এ ঘটনায় নিম্নপদের দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এরপরও দুই কর্মকর্তাই বিল পরিশোধের সব ব্যবস্থা করেন। কুলুতিয়া খালে রেগুলেটর নির্মাণের যে প্যাকেজে অভিযান চালায় সেখানে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। তখন কাজটি পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোং। এ কাজে বিল পরিশোধের সুপারিশের জন্য দুদকের প্রতিবেদনে দায়ী করা হয় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশল সালাহ উদ্দীন বলেন এমন কোন কাজ এখানে ঘটেনি।

  • শেয়ার করুন