প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
আন্দোলনের মাঠে কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় যুবদলের বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দল গোছানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে যে কোন সময় যুবদলের নতুন আহবায়ক কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। এজন্য ‘তেজোদীপ্ত’ নতুন নেতৃত্ব গঠনে মাসখানেক ধরেই কাজ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, যুবদলের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে মোটেই সন্তুষ্ট নয় হাইকমান্ড। আন্দোলন কিংবা নির্বাচনের মাঠে কোন কোন নেতার জিরো উপস্থিতিতে তারা খুবই ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি দেশব্যাপী যুবদল পুনর্গঠনের সাথে যুক্ত ১১ টি সাংগঠনিক কমিটি থেকেও হাইকমান্ড রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে। সেসব রিপোর্টে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতাদের কারো কারো সম্পর্কে নেগিটিভ চিত্র উঠে এসেছে।
২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি এবং সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের সুপারফাইভ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির তিন বছরের মেয়াদ পার হয় এই পাঁচজন দিয়েই।
মেয়াদ শেষে ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যুবদলের ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর উপজেলা-থানা-পৌর শাখার কমিটি গঠন তথা তৃণমূলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষে যুবদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশে ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি যুবদলের ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়।
যুবদলের দফতর সূত্রে জানা গেছে, এসব টিমের তত্ত্বাবধানে সারাদেশের ৯৩৫টি ইউনিটের (উপজেলা-থানা- পৌর) মধ্যে ইতোমধ্যে ৭০০টির বেশি শাখায় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়া শতাধিক কমিটি বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দফতরে জমা রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অচিরেই এসব কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। তবে এসব ইউনিট কমিটি গঠনে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই বরিশাল বিভাগীয় কমিটির টীম লিডার আজিজুল হাকিম আরজুকে পরিবর্তন করে আরেক সহ সভাপতি মোনায়েম মুন্নাকে দায়িত্ব দেয় হাইকমান্ড।
জানা গেছে, তৃণমূলের কমিটি গঠনে বিভাগীয় টীমগুলোর সাথে নিয়মিত সরাসরি কথা বলেন তারেক রহমান। এসব কমিটি গঠনে নেতাদের অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিও তিনি বিভাগীয় টীমগুলোর মাধ্যমেই জেনেছেন। ঢাকা, ফরিদপুর, রংপুর, বরিশালসহ বেশ কয়েকটি বিভাগীয় টীমের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি। স্বচ্ছতার সাথে কমিটি গঠন করায় এসব টীমের দায়িত্বশীলদের ধন্যবাদও জানানো হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় টীমের দায়িত্বে থাকা যুবদলের সহ সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, জেলা-উপজেলা-পৌর ও ওয়ার্ড মিলিয়ে আমরা ৭২টি কমিটি গঠন করেছি। এসব কমিটি কোন তদবীরের মাধ্যমে নয়, ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে।
ফরিদপুর বিভাগীয় টীমের সদস্য যুবদলের সহ সভাপতি মাহবুবুল হাসান পিংকু ভূঁইয়া বলেন, ত্যাগী ও যোগ্যদের দিয়ে আমরা কমিটি গঠন করেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেয়া দায়িত্ব আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। আশা করছি আরো বৃহত্তর পরিসরে আমাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে।
জানা গেছে, ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রামকে সামনে রেখে যুবদলের বর্তমান কমিটিকে আর বেশি দিন রাখতে চায় না হাই কমান্ড। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর গত মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আহবায়ক কমিটি দেয়ার পর হাইকমান্ডের সেই চিস্তা আরো স্পষ্ট হয়েছে। কারণ এই দুইটি কমিটি গঠনের বিষয়ে যুবদলের বর্তমান শীর্ষ নেতারা কিছুই জানতেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই এই কমিটি দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, একইভাবে যুবদলের বর্তমান কমিটিও ভেঙ্গে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হতে পারে।
জানা গেছে, যুবদলের শীর্ষ নেতারা বর্তমান আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পক্ষে। তাদের যুক্তি, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও অনেকে এখনো পদ-পদবি পাননি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে পদায়নের মধ্য দিয়ে তাদের অনেকের কাজের মূল্যায়ন ও সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিত হবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথকে সুন্দর করবে। এজন্য নেতারা ২৭৭ জনের একটি প্রস্তাবিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কাজ করছেন।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছেন। সেসব বৈঠকে তিনি মূলত দ্রুত তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নীরব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কমিটি গঠনের ৭৫ ভাগ কাজ শেষ করেছি। বাকী কাজও দ্রুত শেষ করা হবে। তিনি জানান, যুবদলের বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে তারা কাজ করছেন। তবে যে কোন সময় নতুন কমিটি দেয়ার এখতিয়ার দলের রয়েছে।
তবে এতোদিনেও কেন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি এমন প্রশ্নে যুবদলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘এর মূল কারণ শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। কে কার লোক, কাকে কোন পদে রাখা হবে, সেই সুরাহা করতে করতেই এখন ৫ বছর চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’
যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেছেন, যুবদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান। তার নির্দেশনায় একটি আন্দোলনমুখী যুবদল গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি। সেই কাজ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই চূড়ান্ত।
যুবদলের অধিকাংশ নেতার মত অবশ্য ভিন্ন। তারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি ইতোমধ্যেই দেড় বছরের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলে আরও সময়ক্ষেপণ হবে। তার চেয়ে নতুন কমিটি হলে সেটা সংগঠনের জন্য ইতিবাচক হবে। নেতাকর্মীদের মধ্যেও চাঙ্গাভাব তৈরি হবে।
জানা গেছে, যুবদলের সম্ভাব্য নতুন কমিটির শীর্ষপদে অনেকের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে আবার বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দ্বারস্থও হচ্ছেন। নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদগুলোর জন্য আলোচনায় রয়েছেন যুবদলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ও দীর্ঘদিন যুবদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত এস এম জাহাঙ্গীর, মোনায়েম মুন্না, মাহবুবুল হাসান পিংকু, জাকির হোসেন নান্নু, আব্দুল খালেক হাওলাদার, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, তরিকুল ইসলাম বনি, গোলাম রব্বানী ও মামুন হাসান।
এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক ৪ নেতা আমীরুল ইসলাম আলীম, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের নামও আলোচনায় আছে। এর বাইরে দীর্ঘ ৩৬ মাস কারাভোগ করে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ছাত্রদলের আরেক সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ও পেতে পারেন যুবদলে গুরুত্বপূর্ণ পদ।