প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১
‘যে চেনে সে কেনে। সাদেকের সৃষ্টি জামতলার মিষ্টি’ এই স্লোগান নিয়েই সাদেক মিষ্টান্ন ভান্ডারের পথ চলা’। ১৯৫৫ সাল থেকে এই গোল্লা ঐতিহ্য বয়ে চলেছে। আজো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে সাদেক গোল্লা। শার্শা উপজেলার নাভারন-সাতক্ষীরা সড়কের জামতলা বাজারেই সাদেক মিষ্টান্ন ভান্ডারে পাওয়া যায় এই সাদেক গোল্লা। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও সাদেক গোল্লার কদর রয়েছে।
সাদেক গোল্লা সৃষ্টিকারী শেখ সাদেক আলী বেঁচে নেই। কিন্তু তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তার ছয় ছেলে। সুনামের সাথে বাবার রেখে যাওয়া এ ব্যবসাটি আঁকড়ে ধরে আছেন তারা। প্রতিদিন দেড় থেকে দু’হাজার সাদেক গোল্লা তৈরি হয়। জামতলার শেখ সাদেক তার নামে বিশেষ রসগোল্লা তৈরি করেন গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। স্থানীয়ভাবে যা সাদেক গোল্লা নামে পরিচিত।
যশোর-সাতক্ষীরাসড়কের কাছে ছোট একটা বাজার জামতলা। শুধু রসগোল্লার কারণে দেশ-বিদেশে এ জামতলার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের প্রায় সব জায়গায় রসগোল্লা তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে যশোরের জামতলার সাদেক গোল্লা গুণে, মানে ও স্বাদে অনন্য। এর স্বাদ দেশের আর কোনো রসগোল্লায় পাওয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ মিষ্টি তৈরি করা হলেও স্বাদের কারণে যশোরের সাদেক গোল্লাই সেরা। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত দেশি গরুর দুধ, উন্নতমানের চিনি আর জ্বালানি হিসেবে নির্দিষ্ট কাঠ এ মিষ্টি তৈরির মূলে রয়েছে।
১৯৫৫ সালে চায়ের দোকানদার শেখ সাদেক আলী প্রথম এ মিষ্টি তৈরি করেন। প্রতিদিন গোয়ালারা তার দোকানে গরুর দুধ দিয়ে যেত। একদিন দুধের পরিমাণ বেশি হলে সাদেক দুধ কিনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় কুমিল্লা থেকে আসা এক ব্যক্তি সাদেককে জানান, এ দুধের মান খুব ভালো। তুমি দুধ রেখে দাও। আমি রাতে মিষ্টি তৈরি করে দেব। সেই দুধ থেকেই মিষ্টি তৈরি শুরু।
যশোরের জামতলার রসগোল্লা (সাদেক গোল্লা) কুমিল্লার সেই ব্যক্তির কাছ থেকে শিখে সাদেক রসগোল্লা তৈরির কাজ শুরু করেন। মিষ্টির স্বাদের জন্য একপর্যায়ে সেই রসগোল্লার নাম হয় সাদেক গোল্লা। সেই ১৯৫৫ থেকে ১৯৯৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাদেক নিজ হাতে মিষ্টি তৈরি করে এর সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন। সাদেকের মৃত্যুর পর তার ছয় ছেলে আনোয়ার হোসেন, আলমগীর, শাহিনুর, শাহজাহান, জাহাঙ্গীর ও নূরুজ্জামান ব্যবসায়ের হাল ধরেন। জামতলায় এখন সাদেক গোল্লার তিনটি দোকান রয়েছে। আর একটি রয়েছে যশোরের নাভারন বাজারের সাতক্ষীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
জামতলা বাসস্ট্যান্ডের বটতলায় রয়েছে, সাদেক আলীর প্রতিষ্ঠিত আদি ‘সাদেক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। দোকানটিতে রসগোল্লা ছাড়াও প্রায় সব ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখান থেকেই জামতলার মিষ্টি সরবরাহ করা হয়। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন হয়ে থাকে জামতলার সাদেক গোল্লা।