২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,বিকাল ৪:৫৪

শিরোনাম

গ্যাসের দাম ৩৩ ভাগ বাড়ানোর সুপারিশ

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২

  • শেয়ার করুন

 

গ্যাসের মূল্য ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বর্তমানে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন ঊর্ধ্বমুখী, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের গাড়িতে যখন মানুষের দীর্ঘ লাইন, তখন এ গ্যাসের দাম না কমিয়ে বরং বাড়ানোর সুপারিশে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা জানিয়েছেন, বিকল্প উপায়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে দাম বাড়ানোর সুপারিশে জনদুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো ভোক্তা পর্যায়ে দাম ১১৬ শতাংশ বাড়ানোর জন্য এর আগে প্রস্তাব করেছিল বিইআরসির কাছে। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে তার ওপর গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। চার দিনব্যাপী গণশুনানির গতকাল ছিল প্রথম দিন। গতকাল সকালে পেট্রোবাংলা ও বিকেলে জিটিসিএলের গ্যাস সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

গতকাল সকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান মেমোরিয়াল হলে চার দিনব্যাপী এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

সকালে গণশুনানিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৪৭ পয়সা নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি (মূল্যায়ন) কমিটি। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা ১১ পয়সা বা ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবিত পাইকারি গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওপর গণশুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে বলা হয়, পেট্রোবাংলা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির হিসাব ধরে গ্যাসের ঘনমিটার প্রতি ২০ টাকা ৩৬ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু কারিগরি কমিটি বলছে, এই পরিমাণ এলএনজি এখন আমদানিই হচ্ছে না। সুতরাং এখন পেট্রোবাংলার মিশ্রিত গ্যাসের দাম ১৫ টাকা ৩০ পয়সা।

কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে কমিটির প্রধান দিদারুল আলম বলেন, ‘আমরা ২০২১-২২ অর্থবছরের গ্যাস আমদানির রিয়েল ডাটা যাচাই করেছি। সে হিসাবেই এই দামের সুপারিশ করেছি।’

শুনানির শুরুতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করে আসছে। কমিশন হচ্ছে আধাবিচারিক ব্যবস্থা, এখানে যুক্তি ও প্রমাণের মাধ্যমে মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়।

গ্যাসের সঞ্চালন খরচ ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব জিটিসিএলের : গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) সঞ্চালন খরচ ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরে ৭৩ পয়সা এবং পরবর্তী বছরে ৮৬ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৪৮ পয়সা করার পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে। বিকেলের শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো: কামরুজ্জামান। বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, কোম্পানিগুলোর রিপোর্টে সামাজিক কী প্রভাব পড়বে সেভাবে উঠে আসেনি। সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। কারিগরি কমিটিও সেভাবে তুলে আনেনি। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ফুড, ফুয়েল এবং সারের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমরা বন্ধুর পথ অতিক্রম করছি। কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির আবেদন করায় আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে গণশুনানি নেয়া হচ্ছে। তথ্য প্রমাণ ও যুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। কোনো অবস্থাতেই অন্যায্য কিছু করা হবে না।

দাম বাড়ানো এড়ানো যায় কি না : জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জ্বালানি বিভাগের হাতে একাধিক বিকল্প ছিল। তারা সে দিকে না গিয়ে দাম বাড়ানোর মতো জটিল পথে পা দিয়েছে। গ্যাস সরবরাহ আসছে প্রধানত দু’টি উৎস থেকে। একটি হচ্ছে দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলন, দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি। আমদানি দুই ধরনের চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। একটি হচ্ছে জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়, আর স্পট মার্কেট (দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমান দর) থেকে। দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জিটুজি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। দাম বেড়েছে শুধু স্পট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের। যার পরিমাণ সামান্যই। বর্তমানে দৈনিক ২৯৫ কোটি ৬০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। একই দিনে স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা গ্যাসের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ কোটি ১৬ লাখ ঘনফুট। যার অনুপাত বের করলে দাঁড়ায় মাত্র ৪ শতাংশের মতো।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, দাম বেড়েছে স্পট মার্কেট থেকে আনা কমবেশি ৫-৬ শতাংশ। সিস্টেমের ৫-৬ শতাংশের দাম বেড়েছে বলে পুরো গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়াতে হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য! তারা গোঁজামিল দিয়ে হিসাব দেখাচ্ছে, এসব হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। তবুও দাম বাড়ানো উচিত হবে না। তারা জানিয়েছেন, এমনিতেই করোনার কারণে ভোক্তাদের অবস্থা নাকাল। গ্যাসের দাম বাড়ালে গণপরিবহনসহ পণ্যবাহী পরিবহনের ভাড়া বাড়বে। এতে করে দ্রব্যমূল্যের দামও বেড়ে যাবে।

  • শেয়ার করুন