প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২
কয়রা প্রতিনিধিঃ উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলায় লবণাক্ত জমিতে বাদাম চাষ করে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। গত বছরে সামান্য কিছু জমিতে চিনা বাদামের চাষ করে কম খরচে লাভের মুখ দেখায় চিনা বাদাম চাষে এগিয়ে আসে অনেক কৃষক। চলতি বছর অনেক জমিতে বাদাম চাষ করে লাভগুনছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ পরিক্ষামূলকভাবে ২০১৬ সালে প্রথম কয়রায় বাদাম চাষ শুরু করেন। ঐ বছর বাদাম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে বাম্পার ফলন ফলাতে সক্ষম হয়। যে কারনে লবণাক্ত জমিতে পরিক্ষামূলকভাবে দুই জন কৃষকের মাধ্যমে সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগ বাদাম চাষ করে আশানুরুপ ফলন উৎপাদন করে তাক লাগায় কয়রার কৃষকদেরকে। চলতি বছরের শুরুতেই উপজেলার উত্তর বেদকাশি ও ঝিলিয়াঘাটা ২ জন কৃষক ৪ বিঘা জমিতে বাদাম
চাষ করেন এবং সম্প্রতি মাঠ থেকে বাদাম তোলা শুরু হলে বিঘা প্রতি ভাল বাদাম উৎপাদন করতে পেরেছে বলে জানা যায়। যার ফলে উপজেলার অনেক এলাকার কৃষকরা আগামীতে বাদামের চাষ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের উত্তর বেদকাশি
গ্রামের বাদাম চাষী মফিজুল ইসলাম মুন্না বলেন, তার আমন ধান কাটা শেষে পরিত্যাক্ত ৬০ শতক জমিতে চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছে। অনুরুপ অনেকে বাদাম চাষী সামান্য খরচে বাদাম চাষ করে লাভের আশা করছেন, কেননা তারা অনেকেই মাঠ থেকে বাদাম তোলা শেষ করেনি। তবে ভাল ফলন উৎপাদন করে বেজায় খুশি। ঝিলিয়াঘাটার কৃষক পল্লী চিৎিসক কামরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগ আমাদের কে বাদাম চাষের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং ভাল বীজ, সার কটিনাশক সরবরাহ করার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা বাদাম চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। সরেজমিন গবেষনার বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসান বলেন, আমরা এ বছর কৃষকদের মাঝে বারী চিনা বাদাম ৯ চাষে সহযোগিতা করেছি। এতেই কৃষকরা খুবই ভাল ফলন পেয়েছে।
৩নং কয়রার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, কয়রার কৃতি সন্তান খুলনার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন অর-রশিদ আইলা পরবর্তী বিগত ৪ বছর ধরে উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলার মাটিতে শুধু বাদম নয় ধান, তরমুজ, মুগডাল, সরিসা, ভুট্রা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে কয়রায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিন্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন গবেষণা বিভাগের আওতাধীন এমএলটি সাইট কয়রা নামে একটি নতুন অফিস করেন। তিনি
পরিক্ষামূলকভাবে এসব ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সময় দেশি ও বিদেশী কৃষি বিশেষজ্ঞদের কয়রায় এনে মাটি পানি এবং ফসলের মাঠ পরিক্ষা করেছেন। ফলে চলতি শীত
মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসব ফসলের আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছে।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.হারুন অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ১০ টি বাদামের জাত আবিস্কার করেছেন। তিনি আরও বলেন, চিনা বাদাম একটি অর্থকরী ফসল। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভোজ্য তৈলবীজ। সব বয়সের মানুষের জন্য চিনা বাদাম স্বাস্থ্য সম্মত খাবার। শখ করে কখন কখন হয়তো খাওয়া হয় তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে জানলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই বাদাম রাখতে চাইবেন। শরিরের মাত্রাধিক কোলেস্টেরল
হ্নদ রোগ, উচ্চ রক্ত চাপ, ওজন বৃদ্ধি, ও ডায়াবেটিস এর মতো কঠিন রোগ প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। বাদামের অসাধারণ কার্যকরি ফ্যাট শরীরে কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে । তাছাড়া এই বাদামে চর্বিও
কমাতে সাহায়্য করে। রাতে ১০- ১৫ টি বাদাম বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে।
চিনা বাদামে প্রচুর পরিমানে বি-৩ আছে যা মস্তিস্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। শরিরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। চিনা বাদামে আ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে রোগকে বাসা বাধতে বাঁধা দান করে। তাই প্রতিদিন দিন চিনা বাদাম খেয়ে শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।