২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ৭:১০

শিরোনাম

চীনের বৃহত্তম বানিজ্যিক জোটে আগ্রহ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

চীনের বৃহত্তম মুক্তবাণিজ্য জোট রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)-এ যোগ দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে সরকার। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তা মোকাবিলার জন্য এই বাণিজ্যিক জোটটি কতটা কার্যকর হতে পারে এখন সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই জোট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তুলছে। আর এই জোট গঠনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে এশিয়ায় বাণিজ্যের নীতি এবং শর্ত নিয়ন্ত্রণ করবে চীন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলোর বেশির ভাগ এই চুক্তিতে থাকায় এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে সরকারি-বেসরকারি মহল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরসিইপির প্রভাব নিয়ে গত রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। ওই সভায় যেটি ওঠে আসে, সেটি হচ্ছে-আপাতত এই বাণিজ্য জোটটি দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ যখন উন্নত বিশ্বে শুল্ক সুবিধা হারাবে- তখন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর প্রতিযোগিতার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এই আশঙ্কা থেকে বৃহত্তম এই বাণিজ্যিক জোটে চোখ রাখছে বাংলাদেশ।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আরসিইপি একটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক জোট, যাদের আয়ত্তে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ অর্থনীতি। এ ধরনের একটি জোট দেশের বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলে- এখন সেটিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহত্তম এই বাণিজ্যিক জোটে যোগ দেওয়া যাবে কি-না সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

আমাদের লাভ-লোকসান পর্যালোচনা করে দেখছি। সচিব জানান, সাফটা ও আপটার আওতায় বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছি আমরা। এর বাইরে এলডিসি হিসেবে উন্নত দেশগুলোতে বাজার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ২০২৬ সালের পর এই সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।

সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সামনের দিকে চোখ রাখতে হচ্ছে। এ কারণেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি আরসিইপির মতো বৃহত্তম বাণিজ্যিক জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের নভেম্বরে আসিয়ান জোটসহ ১৪টি দেশের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন। এতে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ ছাড়াও রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এই চুক্তির ফলে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)

নামে নতুন যে বাণিজ্য জোট গঠিত হয়েছে তার অর্থনীতির আয়তন বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ। এ ধরনের একটি বাণিজ্যিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দিতে পারলে এটি শুধু অর্থনৈতিক সক্ষমতাই বাড়াবে না, পাশাপাশি রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও বাণিজ্য উদারীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন-

বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রতিযোগী রাষ্ট্র ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো এই চুক্তিতে থাকায় তারা রপ্তানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণে আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের আরসিইপি চুক্তির ফলে বাংলাদেশে তিন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। (১) চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সাপ্লাইচেইন গড়ে ওঠবে, ফলে তাঁরা সস্তায় কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য সংগ্রহ করবে; (২) এর ফলে তাঁরা আরও কমমূল্যে পণ্য রপ্তানি করবে, যেটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে আরও বেশি প্রতিযোগিতায় ফেলে দেবে; এবং (৩) চুক্তিবদ্ধ দেশগুলো একে অপরকে বিনিয়োগ সুবিধা দেবে, ফলে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগের বেশির ভাগই যাবে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশে, যা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত করবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, চীনের নেতৃত্বে যে বাণিজ্যিক জোট আরসিইপি-এটা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বাংলাদেশের। কেন না, বাণিজ্য প্রতিযোগী একাধিক দেশ এই জোটের সদস্য।

বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে এমন বড় দেশও এই জোটে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা আর পাবে না। এ অবস্থায় নতুন যে বাণিজ্যের আলোচনা চলছে সেটা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার উপায় নেই। সিপিডির এই গবেষক বলেন, আরসিইপি-তে যোগ দেওয়ার আগে আমাদের যেমন লাভ-লোকসান খতিয়ে দেখতে হবে, তেমনি বাণিজ্য সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে দরকষাকষির সক্ষমতার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। সামনের দিনগুলোতে আমদানি বাণিজ্যও উদারীকরণের দিকে যেতে হবে। এই কৌশলগুলো এ ধরনের জোটে যোগ দেওয়ার প্রাথমিক শর্ত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আলোচিত জোট থেকে সুবিধা আদায়ে কৌশলগত দক্ষতা অর্জন করা।

  • শেয়ার করুন