২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সন্ধ্যা ৭:২১

শিরোনাম
কয়রায় প্রতারণা করে বয়োবৃদ্ধ মহিলার বয়স্ক ভাতার টাকা উত্তোলন  আজ তারেক রহমানের জন্মদিন দুদকের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে স্লুইস গেটের কাজ দেয়ার পয়তারা কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে নবাগত অফিসার ইনচার্জ ইমদাদুল হকের মতবিনিময় কয়রায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে র ্যালী ও আলােচনা সভা কয়রায় মিথ্যা মামলা দি‌য়ে হয়রা‌নি করার প্রতিবা‌দে সংবাদ স‌ম্মেলন কয়রায় অজগার সাপ উদ্ধার পরে সুন্দরবনে অবমুক্তি কয়রায় যুব দিবসের আলোচনা সভায় তোপের মুখে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম কয়রায় জাতীয় স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা

জন্ম নিবন্ধনে ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ; ৩ মাসেও মিলছেনা নিবন্ধন

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২

  • শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জন্ম নিবন্ধনের জটিল প্রক্রিয়ার করাণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর ওপর এ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় ভোগান্তি আরও বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, জন্ম নিবন্ধন করার শর্ত হিসেবে কোথাও কোথাও হোল্ডিং ট্যাক্সের রসিদ ও ভূমির নামজারির খতিয়ানও চাওয়া হয়! ভোটার তালিকা, স্কুলে ভর্তি ও পাসপোর্ট করাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্ম নিবন্ধন অত্যাবশকীয় হওয়ায় ভোগান্তি মাথায় নিয়েই দফতরে দফতরে ঘুরছে মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে এ কাজ বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি। ভুল সংশোধনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে যেতে হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও।

জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী প্রত্যেক শিশুরই জন্মের পর নিবন্ধন করার কথা বলা আছে। দেশের জাতীয় শিশুনীতি ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৬-এ সব শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। দেশে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় বলছে জন্ম নিবন্ধন শিশুর মৌলিক অধিকার, যা রাষ্ট্রীয় অধিকার লাভের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু শিশুর সেই মৌলিক অধিকার লাভে পূর্বশর্ত জন্ম নিবন্ধনে ভোগান্তির শেষ নেই। ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন করছেন, মৌলিক অধিকার হলে এত ভোগান্তির শিকার হতে হবে কেন? অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দিয়েও জন্ম নিবন্ধন করতে হচ্ছে। সামান্য ভুল সংশোধন করতে গিয়েও মাসের পর মাস দফতরে দফতরে ঘুরছেন নাগরিকরা।

সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণের জন্য ছেলেমেয়ের পাসপোর্ট আবেদন করেতে যান রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। সেখানে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সনদও জমা দেন তিনি। কিন্তু পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়, ছেলেমেয়ের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন এটা ঠিক করে দিতে পারবে।

পাসপোর্ট অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সিটি করপোরেশনে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করতে যান সোহরাব। তবে সেখান থেকে জানানো হয়, ছেলেমেয়ের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে করতে হলে বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধনও করাতে হবে। এরপর দিন স্বামী-স্ত্রীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গেলে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে বলা হয়। একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে ফরম ফিলাপ করে জামা দেওয়ার এক মাস পর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন তিনি। তখন সার্ভার জটিলতাসহ নানা কারণ দেখিয়ে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন লাগবে বলে জানানো হয়। এরপর আরও এক মাসের বেশি সময় ঘুরে স্বামী-স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রায় তিন মাস ঘুরে ছেলেমেয়ের জন্ম সনদ সংগ্রহ করেন এ ব্যক্তি।
মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ে নাম সংশোধন করতে আসেন আনিছুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। পরে জানতে পারেন নাম সংশোধনের জন্য তাকে যেতে হবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে গেলে কতদিন লাগবে বা কার কাছে যাবেন তাও জানেন না তিনি।

রাজধানীর উত্তরায় সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের জন্য সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যান সাথী আক্তার। তার দাবি, সেখানে জনপ্রতি জন্ম নিবন্ধনের জন্য ২ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তিনি টাকা না দিয়ে কম্পিউটারের দোকান থেকে ২০০ টাকা দিয়ে অনলাইন ফরম পূরণ করেন। জমা দেওয়ার দেড় মাস পরও নিবন্ধন হাতে পাননি বলে দাবি করেন তিনি।

হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন থাকার পরও ছেলের স্কুল থেকে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিরপুরের বাসিন্দা সজিব সাদিক। তিনি জানান, প্রথমে ভেবেছিলাম পুরনো জন্ম নিবন্ধন নিয়ে গেলে অনলাইনে তুলে দেবে। কিন্তু এরপর আবার নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে বলা হলো। শুধু তাই নয়, এজন্য আমার ও আমার স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধনও করতে হয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে কম্পিউটারের দোকান থেকে শুরু করে পদে পদে কী পরিমাণ ভোগান্তি তা বলে বোঝানো যাবে না।

মোহাম্মদপুরের সিমু আক্তারও একই রকম ভুক্তভোগী। তিনি জানান, জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রথমে হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ ও বাচ্চার টিকা কার্ড চেয়েছে। এরপর একদিন নামজারির খতিয়ান, স্থানীয় কাউন্সিলেরর প্রশংসাপত্র, বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, বিদ্যুৎ বিলের কপি দিয়েছি। পরে বলছে, বাবা-মায়েরও অনলাইন নিবন্ধন করতে হবে।

এভাবে দফতরে দফতরে ঘুরে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এমদাদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, গত বছরের জুন পর্যন্ত হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে তোলা গেছে। এরপর থেকে আর অনলাইনে এগুলো দেখা যায় না। ফলে আবার নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করতে হচ্ছে। তাই যারা আসেন তাদের আমরা নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে বলি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংশোধনের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ীই ১ মাস লাগার কথা। সেখানে কিছু ক্ষেত্রে আরও একটি বেশি সময় লাগতে পারে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যবস্ততার করণে কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে। তবে সব জায়গায় এমন হচ্ছে না।

অপর এক কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে ৫ হাজারের বেশি অফিসে জন্ম নিবন্ধন করা হয়। এর মধ্যে দু-চার স্থানে জটিলতা আর ভোগান্তি থাকতে পারে। বেশির ভাগ জায়গায় খুব সুন্দরভাবেই জন্ম নিবন্ধন হচ্ছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য ২০২১ ও চলতি বছরে ১ কোটি ২১ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে সংশোধন করে নাগরিকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে।

এদিকে নতুন ভোটার হওয়া এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাধ্যমিক সার্টিফিকেট থাকার পর নতুন ভোটার হতে গেলে আনলাইন জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হচ্ছে। হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা।

তবে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, ১৯৮৬ সাল থেকে জন্ম নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতদিন কেউ স্বেচ্ছায় নিবন্ধন করতেন না। তাই সব জায়গায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশের সব মানুষ জন্ম নিবন্ধনের আওতায় থাকলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল পলাশ কান্তি বালা বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে সংশোধন হলে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় করতে পারে। কিন্তু এর বেশি হয়ে গেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রে ৯০ দিন পর সংশোধন করতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হয়।

  • শেয়ার করুন