২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সকাল ১১:৫০

জরুরি বাঁধ মেরামতের নামে অর্থ লোপাট; নিজেদের লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে পাউবো

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ খুলনার কয়রা উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘আপৎকালীন জরুরি বাঁধ মেরামত’-এর আওতায় ৪৩টি স্থানে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ চলমান রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্নিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তালিকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে নিজেদের লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। কাজের তালিকায় যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই চলমান কাজ সম্পর্কে জানে না। ফলে বাঁধ মেরামতের নামে দায়সারা কাজ করে সরকারি অর্থ নয়ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাতক্ষীরা-২ বিভাগের আওতায় হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সাতক্ষীরা থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করেন। উপজেলার আমাদিতে উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং আংটিহারায় সেকশন কর্মকর্তার কার্যালয় থাকলেও সেখানকার অফিস কক্ষের তালা কখনোই খুলতে দেখা যায়নি। যে কারণে কাজের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কাজের সাইটে সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও কোথাও তা দেখা যায় না। ফলে বাঁধ মেরামত কাজের গুণগত মান যাচাইয়ের কোনো সুযোগ না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়সারা কাজ করে বরাদ্দের অর্থ লোপাট হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলায় ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে জোড়শিং এলাকায় দুই গ্রুপে ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬০০ মিটার বাঁধ মেরামতসহ অস্থায়ী ঢাল সংরক্ষণ কাজ চলছে। দুটি কাজই করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফফার হোসেন। তালিকা অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রানা এন্টারপ্রাইজের নাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম ওই কাজ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, যতদূর জানি পাউবোর তত্ত্বাবধানে এ মুহূর্তে যেসব কাজ চলমান রয়েছে, তার কোনোটিই টেন্ডারে ওঠেনি। অফিস থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা গেছে, ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের শাকবাড়িয়া ও চৌকুনি এলাকায় ৯০ মিটার বাঁধ মেরামতসহ জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিং এবং ৭০০ মিটার মাটির কাজে কেএম মনিরুজ্জামান নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। প্রায় ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দের এ কাজ দুটি করেছেন সোলায়মান নামে একজন শ্রমিক সর্দার। তিনি পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমি কখনোই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করিনি। আমি মূলত এলজিইডির কাজ করে থাকি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার কেন করা হয়েছে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইব।

জানা গেছে, ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতিতে কাজগুলো বাস্তবায়ন করছেন পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তারা। সে ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পাউবোর স্থানীয় দায়িত্বশীল দু’জন কর্মকর্তা তাদের পছন্দের লোকজন দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। প্রকল্পের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় তা ধসে পড়েছে। আবার বালুর বস্তাগুলো বাঁধের ঢালে ব্যবহার না করে তা বিক্ষিপ্তভাবে রাখা হয়েছে, যা বাঁধের কোনো কাজে আসছে না। বিল্লাল হোসেন নামে স্থানীয় একজন ইউপি সদস্য বলেন, টেন্ডারবিহীন কাজগুলো পাউবোর স্থানীয় দুই কর্মকর্তা সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে করিয়ে নেন। এলাকার শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ শেষে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে বিল তুলে নেওয়া হয়। এতে উভয়ই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। মাঝখান থেকে সরকারি বরাদ্দের অপব্যবহারের ফল ভোগ করছি আমরাই।

জানতে চাইলে পাউবো সেকশন কর্মকর্তা (এসও) মশিউল আবেদীন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এ কাজগুলো করা হয়ে থাকে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে বিল করা হয়। ঠিকাদারের সম্মতিতে এভাবে কাজ করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। পাউবো কয়রা উপজেলার আমাদি কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, বাঁধ মেরামত কাজে পাউবোর কারও শেয়ার আছে কিনা আমার জানা নেই। পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি। পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কাজ করা হচ্ছে। পাউবোর কোনো কর্মকর্তা কাজের পার্টনার হয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

  • শেয়ার করুন