প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২১
পাট দিয়ে পরিবেশ বান্ধব টিন তৈরির বিস্ময়কর এক আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মুবারক আহমেদ খান।
পাটের ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে জুট। তাই পাট দিয়ে তৈরি বলে এই টিনের নাম জুটিন। বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, এই জুটিন ১০০ বছর অনায়াসে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারে।
টিনের প্রধান উপকরণ লেড এবং জিংকের যোগান পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এই অর্থসাশ্রয়ের কথা চিন্তা করেই বিজ্ঞানী এই আবিষ্কারটি করেন। কারণ এই জুটিনের ব্যবহার বাড়লে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা।
এছাড়াও আমরা প্রতিনিয়ত যে ধাতব টিনগুলো দেখে থাকি সেগুলো কিছুদিন পরেই মরিচা ধরে যায়, ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং এতে পরিবেশ নানাবিধ হুমকির সম্মুখীন হয়। কিন্তু এই জুটিনের ব্যবহার বাড়লে এই সমস্যা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও পাটের জট এবং বিভিন্ন রাসায়নিকের মিশ্রনই মাত্র বিশ মিনিটের মধ্যে তৈরি করতে সক্ষম হবে এই জুটিন। যদি বাণিজ্যিকভাবে এই জুটিন উৎপাদন করা হয় তবে এই জুটিন তৈরির সময় আরো কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে প্রয়োজন হবে না কোনো বিশেষ কারিগরীর এবং প্রয়োজন হবে না গ্যাস, বিদ্যুৎ বা অন্য বিশেষ কোনো জ্বালানীর।
এই জুটিন অন্যান্য ঢেউটিনের থেকে শতভাগ মজবুত। যদি এই জুটিনের ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পায় তবে কমিয়ে আনা সম্ভব পরিবেশের ক্ষতি এবং সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা।
মোবারক আহমদ খান একজন বিজ্ঞানী যিনি পাটের বাণ্যিজ্যিক ব্যবহার ও সম্ভাবনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯০-এর দশক থেকে গবেষণা করছেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ডাটাবেজ স্কোপাসের তথ্যানুসারে, বৈশ্বিকভাবে পাট বিষয়ক গবেষণায় তাকে প্রধান একজন বিজ্ঞানী বলে মনে করা হয়।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানীক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পাট থেকে উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগ। পাটের তৈরি জুটিন নাম ঢেউটিন, পাটের তৈরি হেলমেট ও টাইল্স।
মোবারক আহমদ খান শিক্ষাজীবনে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর ডিগ্রী নেয়ার পর পলিমার এবং তেজস্ক্রিয় রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক ছিলেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানীক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
মোবারক আহমদ খান ২০০৯ সালে পাটের তেরি ঢেউটিন উদ্ভাবন করে যা জুটিন নামে পরিচিত। জুটিন তৈরিতে তিনি পাটের সঙ্গে ব্যবহার করেনে পলিমারের মিশ্রণ। ২০১৬ সালে তিনি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ফরমালিনের বিকল্প হিসেবে অ-ক্ষতিকারক চিতোজান তৈরি করে করেন। সম্প্রতি তিনি পাট থেকে পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ তৈরি করেছেন যা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়ও তিনি পাট দিয়ে অসংখ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস উদ্ভাবন করেছেন।
পাট বিষয়ক গবেষণায় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি মোবারক আহমদকে ২০১৫ সালে স্বর্ণপদক প্রদান করে। এছাড়া তিনি ২০১৬ সালে জাতীয় পাট পুরস্কার ও ২০১৭ সালে ফেডারেশন অব এশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কারে ভূষিত হন। বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তার কাজের ওপর নথিপত্র প্রকাশ করে। ১৯৯৮ সালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথ্যসূত্রের প্রকাশনা ‘হুজ হুতে’ তার নাম প্রকাশ করা হয়।