২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ১০:১৯

শিরোনাম

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান-সচিব উধাও ৫ কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন এবং সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজা আট দিন ধরে উধাও। তাদের দু’জনকে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও খুঁজে পাচ্ছে না। বিপুল অর্থ আত্মসাতের দায়ে গত ১৮ অক্টোবর তাদেরসহ মোট পাঁচজনের নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষা বোর্ডের বাংলোর নিজ নিজ বাসা থেকে তারা দু’জন বেরিয়ে যান। তার পর থেকে তাদের আর খোঁজ মিলছে না।

এদিকে, আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। ২ ডিসেম্বর থেকে হবে এইচএসসি। বোর্ডে পরীক্ষার প্রস্তুতি কাজে জরুরি অনেক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। অথচ বোর্ডের শীর্ষ দুই নীতিনির্ধারকই পালিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বোর্ডের অন্তত পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। অর্থ আত্মসাতের দায়ে কোনো শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পালিয়ে থাকার ঘটনা দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। আলোচিত দু’জনই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা।

গত ১৮ অক্টোবর বোর্ড ছেড়ে যাওয়ার আগে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন অফিসিয়াল ফাইলে নোট রেখে যান, দাপ্তরিক কাজে তিনি গাজীপুরে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার চালকসহ তার অফিসিয়াল গাড়িও নিয়ে গেছেন। তবে গাজীপুরে যশোর শিক্ষা বোর্ডের দাপ্তরিক কী কাজ থাকতে পারে, বোর্ডের কেউই তা বলতে পারছেন না।

দুদকের মামলা হওয়ার দিন একই সময়ে আট দিনের মেডিকেল ছুটির আবেদন রেখে বোর্ড ছাড়েন সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজা। ১৮ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ পাঁচজনের নামে মামলা করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ধরা পড়ে আরও আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতি ও আত্মসাতের ঘটনা। একজন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততায় এমন বৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সারাদেশে সমালোচনার ঝড় তুলছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ ঘটনা যশোর শিক্ষা বোর্ডকে শুধু কলঙ্কিতই করেনি, কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

চেয়ারম্যান ও সচিবের অনুপস্থিতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘিরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বোর্ডের। সমস্যার সমাধান না হলে সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কিত অনেকেই।

এই বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু অভিযোগ করেন, অধ্যাপক আমীর সচিব থাকার সময়ই হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ও তার ব্যবসায়িক পার্টনারদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই চেক জালিয়াতির ঘটনা। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসবে। এর আগে ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তিনি তদবিরে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটির টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আমীরুল আলম খান গণমাধ‌্যমকে বলেন, যাই ঘটুক না কেন চেয়ারম্যানের বোর্ডেই থাকার কথা। তিনি কেন আত্মগোপনে গেলেন? ব্যাপক তদন্ত হওয়া উচিত এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার। দ্বিতীয়ত, শুধু এই বোর্ডে নয়, মোল্লা আমীর যত স্টেশনে চাকরি করেছেন, সবগুলোতেই নানা অপকর্মের জন্ম দিয়েছেন। কারণ তার অতীত রেকর্ড ভালো নয়। সেগুলোরও বিচার হওয়া দরকার। সব জেনেশুনেও এমন একজন ব্যক্তিকে বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে সরকারই বসালো কেন?

এ ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ‌্যম‌কে বলেন, মামলা হওয়ার কথা আমরা শুনেছি। চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছিলেন যে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তারা নিজেরাই পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে, তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন আমাদের দিন। আমরা আরেকটি কমিটি গঠন করিনি, কারণ একই বিষয়ে দুটি কমিটি করলে অকারণে কাজের সময় নষ্ট হয়। প্রতিবেদন পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব ভেবেছিলাম।

সচিব বলেন, উনারা পলাতক কিনা জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব এ ব্যাপারে। তবে আইন অনুসারে মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে এবং গ্রেপ্তার হলে উনারা সাময়িক বরখাস্ত হবেন।

এসএসসি পরীক্ষা ও বোর্ডের অন্যান্য কার্যক্রমে সৃষ্ট অচলাবস্থা প্রসঙ্গে মাহবুব হোসেন বলেন, ঢাকা বোর্ড পরীক্ষা কনডাক্ট করে। তারা জানিয়েছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকলেই পরীক্ষা নেওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না।

চেয়ারম্যান মোল্লা আমীরের আগের কর্মস্থলের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কেউ আগে জানায়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, যে কোনো দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্সে থাকব।

  • শেয়ার করুন