২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ১০:৫২

শিরোনাম

সিমান্ত দিয়ে ঢুকছে গরু দুশ্চিন্তায় দেশী খামারিরা

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১

  • শেয়ার করুন

দেশ গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি এসব পশুর মাংস রপ্তানি করতেও সক্ষম। দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে বছর দুয়েক আগে যে কোনো ধরনের গবাদি পশু আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদেশি গরুর কারবারিদের। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কৌশলে বিদেশি গরু আনছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে গত বছর থেকে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও ঢুকছে বিদেশি গরু। এই কোরবানির ঈদ সামনে রেখে শুধু কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই প্রতিদিন আসছে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের নানা জাতের তিন-চার হাজার গরু। এর মধ্যে রয়েছে মাংসের জন্য বিখ্যাত ব্রাহমা জাতের গরুও। এছাড়া কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু। এসব খবরে ক্ষতির আশঙ্কায় আছেন সাধারণ খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ রয়েছে। কোনোভাবেই বিদেশি গরু বৈধভাবে দেশে আনার নিয়ম নেই। তারপরও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই ঢুকছে গরু।

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর সূত্র জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু আনা হচ্ছে। শুধু টেকনাফের করুটুল সীমান্ত এলাকা দিয়েই প্রতিদিন তিন হাজারের মতো গরু আসছে বাংলাদেশে। কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে অবৈধভাবে এসব গরু আনা হচ্ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন দেশের খামারিরা। জানা গেছে, টেকনাফের আবু সৈয়দ মেম্বারসহ কয়েকজন স্থানীয় কারবারির ট্রলারে মিয়ানমার থেকে ব্রাহমাসহ নানা জাতের গরু আসছে। একেকটি ট্রলারে থাকে ২৫-৩০টি গরু। এসব গরুর জন্য কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হচ্ছে।

আরো জানা যায়, আবু সৈয়দ মেম্বার ও মো. শহিদ এখন মিয়ানমার থেকে গরু আনছেন। কখনো রাতের আঁধারে, কখনো দিনের আলোতেই গরু আনা হয়। তাদের মতো আরো বেশ কয়েকজনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরাসহ দেশের গরু ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফের গরু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ মনির বলেন, ‘গত কয়েক দিনে কিছু ব্রাহমা গরুসহ অন্যান্য জাতের গরু ঢুকেছে বলে শুনেছি। যারা এসব গরু এনেছে, তাদের নামেই এসব গরুর চালান, ভ্যাট হয়েছে। ওই সব চালান ও ভ্যাটের কপি জোগাড় করলেই বের হবে ওই সব গরু কারা কীভাবে এনেছে।’

মিয়ানমার থেকে গরু আনার কথা স্বীকার করেছেন টেকনাফের আবু সৈয়দ মেম্বার নিজেও। তিনি বলেন, ‘এ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই আড়াই থেকে তিন হাজার গরু আসছে। শুধু আমি না, অনেকেই আনছেন। কিন্তু আমাদের কাছে কাগজপত্র আছে, চালানও আছে ব্রাহমা গরুর ক্ষেত্রে। অন্য গরু কীভাবে আসছে, আমার জানা নেই। গত ৪০ বছর ধরেই এ সীমান্ত দিয়ে গরু আসে। এখনো আসছে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে চলতি মাসের ৫ জুলাই টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আমরা গবাদি পশু আমদানি বন্ধ করে দিই। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী আমাদের এই নির্দেশ জানতেন না। আবার অনেক ব্যবসায়ী গরুর জন্য মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের আগাম টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। এর কারণে একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যে কারণে যেসব ব্যবসায়ী আগাম টাকা দিয়ে মিয়ানমারের গরু অর্ডার করে রেখেছিলেন, আমরা শুধু তাদের গরু আনতে পাস দিয়েছি। তাদের গরু আনা হয়ে গেলে আমরা বিজিবিকে এই বর্ডার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বলব। তখন আর কোনো গরু দেশে আসবে না।

বিদেশি গরু আসার খবরে ক্ষুব্ধ কুষ্টিয়ার প্রান্তিক খামারি সুমন খন্দকার। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছর লালন-পালন করে গরু বড় করছি। আর সিন্ডিকেট করে কোরবানি সামনে রেখে থাইল্যান্ড থেকে গরু এনে আমাদের বাজার ধ্বংস করে দিচ্ছে। কীভাবে এসব গরু বাংলাদেশে আসছে, সেটি খতিয়ে দেখলে সব তথ্য বের হয়ে আসবে। আমরা যারা গরু পালনের ওপরই নির্ভরশীল, তাদের বড় উপকার হবে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শেখ আজিজুর রহমান জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে গরু-ছাগল উৎপাদন তথা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় পশু আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে বাংলাদেশে পশু না ঢুকতে পারে, সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি জানান, তারপরও কিছু সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরু ঢোকানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সমপ্রতি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু জব্দ করা হয়েছে। গরুগুলো আমেরিকা থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হয়।

কোরবানিতে গবাদি পশুর সরবরাহ প্রস্তুতি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর দেশে কোরবানিযোগ্য ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু হাটে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭০ লাখ ৬৫ হাজার এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৪ হাজার ৭৬৫টি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হূষ্টপুষ্টকৃত গরু-মহিষ সরবরাহ হবে ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি, গৃহপালিত উৎস্য থেকে সরবরাহ মিলবে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ২০০টি। অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে হূষ্টপুষ্টকৃত ছাগল-ভেড়ার সরবরাহ মিলবে ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮টি এবং চরাঞ্চলসহ সারা দেশে গৃহপালিত ছাগল-ভেড়া মিলবে ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি।

প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সমপ্রতি জানিয়েছেন, দেশি গরুতেই পূরণ হবে কোরবানির পশুর চাহিদা। দেশেই পর্যাপ্ত পশু থাকায় কোনোভাবেই গবাদিপশু দেশের বাইরে থেকে আসবে না। তিনি বলেন, হাটগুলোতে পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনে পশু পরিবহনে স্পেশাল ট্রেন থাকবে। পশু বিক্রেতাদের নিরাপত্তায়ও রাস্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কোরবানি নিশ্চিত করা হবে।

  • শেয়ার করুন