প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি: সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন ভোমরখালী বন টহল ফাঁড়ির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৮০০ কেজি বিষ প্রয়োগ করে ধরা চিংড়ি মাছ, ৫০ কেজি সাদা মাছ এবং একটি ট্রলার জব্দ করেছেন। জব্দকৃত মাছ ও ট্রলারের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। এই ঘটনা সুন্দরবনের নাজুক জীববৈচিত্র্যের উপর বিষ প্রয়োগের ভয়াবহ প্রভাবকে আবারও সামনে এনেছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই, ২০২৫) সকাল ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শামীম রেজা মিঠু এবং ভোমরখালী বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে একটি দল সুন্দরবনের মর্জা নদীর বাওন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে বিষ প্রয়োগ করে ধরা বিপুল পরিমাণ চিংড়ি ও সাদা মাছসহ একটি ট্রলার জব্দ করা হয়। খুলনা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক শামীম রেজা মিঠু জানান, একটি চক্র সুন্দরবন থেকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে চিংড়ি মাছ শিকার করে বিক্রির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। এই তথ্য পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে বিষাক্ত চিংড়ি মাছ, সাদা মাছ এবং ট্রলারটি জব্দ করা হয়। জব্দকৃত চিংড়ি মাছগুলো পচনশীল হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তা বিনষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে ২৪ জুলাই সকালে জব্দকৃত মাছগুলো মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়েছে। এ সময় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় পাল, এফসিসিও মনিরুল ইসলাম, কয়রা আইনজীবী ইউনিট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকবার হোসেনসহ অন্যান্য আইনজীবী, সাংবাদিক, বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে বিষ প্রয়োগের ভয়াবহ প্রভাব
সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার একটি মারাত্মক অপরাধ, যা এই বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ শুধু মাছকেই হত্যা করে না, বরং জলজ পরিবেশের পুরো খাদ্যশৃঙ্খলকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
মাছের প্রজাতি বিলুপ্তি: বিষ প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে ছোট মাছ ও মাছের পোনা ব্যাপক হারে মারা যায়। এতে স্থানীয় মাছের প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়।
জলজ উদ্ভিদের ক্ষতি: বিষাক্ত পদার্থ নদীর তলদেশের জলজ উদ্ভিদ ও অণুজীবদেরও ক্ষতি করে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে।
অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রভাব: মাছ শিকারের জন্য ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নদীর পানিতে মিশে কুমির, শুশুক, উদবিড়াল এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মতো অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের জন্যও প্রাণঘাতী হতে পারে। এই প্রাণীগুলো বিষাক্ত মাছ ভক্ষণ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে বা মারা যায়।
মানবস্বাস্থ্যে ঝুঁকি: বিষাক্ত মাছ ভক্ষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্যও চরম ক্ষতিকর। এই মাছের মাধ্যমে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা: সামগ্রিকভাবে, বিষ প্রয়োগের ফলে সুন্দরবনের সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে।
বন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাও জরুরি, যাতে তারা জীবিকার জন্য সুন্দরবনের পরিবেশের ক্ষতিসাধনে বাধ্য না হয়। সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।