প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
সেই আদিকাল থেকেই ভোজন রসিক হিসেবে বাঙ্গালির খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তার ওপর যদি খাবারের তালিকায় থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী ? তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
প্রায় ১০০ বছর আগে লোভনীয় খাবারের তালিকায় এই নামটি যোগ করেছিলেন মহাদেব পাঁড়ে । তার পর থেকে দীর্ঘ সময় একই জনপ্রিয়তা পেয়েছে খাবারটি। বৃটিশ কর্মকর্তা থেকে আমজনতা সবাই তৃপ্ত এর স্বাদে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখনো পছন্দের খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতে আসে ছানামুখীর নাম।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, বৃটিশ রাজত্বকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহাদেব পাঁড়ের তৈরি ছানামুখীর খ্যাতি উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মহাদেব পাঁড়ের জন্ম কাশী ধামে হলেও বড় ভাই দূর্গা প্রসাদদের দোকানে মিষ্টি তৈরি করতে কলকাতায় আসতেন কিশোর মহাদেব।
বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর আশ্রয়হীন হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় তিনি চলে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শহরের মেড্ডায় শিবরাম মোদকের মিষ্টির দোকানে কাজ নেন তিনি। কিছুদিন যেতেই তার বানানো মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
কথিত আছে এই মহাদের পাঁড়ের বানানো একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টি খেয়ে নাকি প্রশংসা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন বড় লার্ট লর্ড ক্যানিং এবং তার স্ত্রী লেডি ক্যানিং। এই মিষ্টির নাম রাখা হয় লেডি ক্যানিং।
বছর ত্রিশেক ধরে ছানামুখী তৈরি করেন পৌর শহরের ভোলাগিরি মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারিগর সঞ্জয় মালাকার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৬ কেজি ছানামুখি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় ৪০ কেজি দুধ আর ৬ কেজি চিনি। প্রথমে ছানা তৈরি করে চারকোনা করে কেটে নিই। তারপর তা চিনির রসে ভেজে নিলেই তৈরি হবে সুস্বাদু ছানামুখী। তবে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার অর্ডার আসলে একটু কড়া করে ভেজে নিতে হয়।
ভোলাগিরিতে ছানামুখী কিনতে আসা রাজশাহীর আব্দুর রাজ্জাক(৫০) বলেন, অনেক দিন এই অঞ্চলের ছানামুখীর কথা শুনেছি। আজ বেড়াতে এসে ছানামুখী চেখে দেখার লোভ সামলাতে পারলামনা । তাই কয়েক কেজি কিনে নিলাম।
শহরের ভগবতি মিষ্টান্ন ভান্ডারের ম্যনেজার রঞ্জিত কুমার ঘোষ বলেন, গরম কালে ছানামুখীর চাহিদা বেশি থাকে। তবে শীতকালেও আমরা প্রতিদিন ৮-১০ কেজি ছানামুখী বিক্রি করতে পারি। বিভিন্ন দেশে থাকা স্বজনদের জন্য পাঠানো হয় এ মিষ্টি। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে এসে এই মিষ্টি নাখেয়ে যাবেন এমন মানুষের দেখা পাওয়া কষ্টকর।