২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,দুপুর ১২:২৯

শিরোনাম

মুদ্রানীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো নির্দেশনা নেই

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

মুদ্রানীতির মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থ সরবরাহ, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কিন্তু এবারের মুদ্রানীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এছাড়া ভয়াবহ মহামারী পরিস্থিতির পর কীভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে, এ বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই। এজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব নীতি গ্রহণ প্রয়োজন ছিল, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন প্রজ্ঞাপন জারির পরামর্শ দিয়েছে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতির প্রতিক্রিয়ায় এমনটি জানিয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠানটি।

ঘোষিত মুদ্রানীতির বিষয়ে নিজেদের বক্তব্যে উল্লেখ করে গতকাল গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রথম ইলেকট্রনিক উপায়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থনীতিতে কভিড-১৯-এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় মুদ্রানীতিতে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগে ব্যবসায় আস্থার ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধে যথাক্রমে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ ও ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ ও ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। কভিড-১৯-এর কারণে এরই মধ্যে কর্মসংস্থানের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। বেসরকারি খাতের নিম্নমুখী ঋণ প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব আরো প্রকট হতে পারে।

২০২১ সালের ৩০ জুন নাগাদ ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ২ দশমিক ৩১ ট্রিলিয়ন টাকা। মূলত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগ পরিবেশে স্থবিরতার কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে বিল্ড। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের বিনিয়োগ শেয়ারবাজার, বন্ড মার্কেট বা রিয়েল এস্টেটের মতো বিকল্প খাতের দিকে প্রবাহিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এর ফলে অ্যাসেট বাবল (লভ্যাংশবিহীন অতিরিক্ত অর্থ) দেখা দিতে পারে। সেবা খাত একটি ভালো সুযোগ হিসেবে হাজির হতে পারে। তবে এজন্য সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন।

বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বেশকিছু নীতি সহায়তা দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে লোন মোরাটোরিয়াম, প্রয়োজনীয় দ্রব্যের রফতানি জন্য এলসি ইস্যুর সময়সীমা বৃদ্ধি, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম, স্টার্টআপ লোন, ১ হাজার কোটি টাকার টেকনোলজি আপগ্রেডেশন ফান্ড, ইডিএফ ফান্ড সম্প্রসারণ ইত্যাদি। তবে এসব উদ্যোগের ফলে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হওয়ার কারণে বড় ধরনের অর্থ সরবরাহ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, এতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়টি উল্লেখ করে বিল্ড বলছে, মুদ্রানীতিতে ১ দশমিক ৩৫ ট্রিলিয়ন টাকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের কথা বলা হয়েছে। যদিও রাজস্ব সহায়তার পরিমাণ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। এছাড়া অনেক উদ্যোক্তা, বিশেষ করে সিএমএসএমইরা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা পাননি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া এবং তাদের জন্য সহায়ক নীতি ঘোষণা করা প্রয়োজন। কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতের। ঋণ সহায়তা না পাওয়ার কারণে এদের বেশির ভাগই সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তাদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সমন্বয়মূলক নীতি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।

এছাড়া বাণিজ্য ভারসাম্য অনুকূলে রাখতে সেবা রফতানি খাতে নীতি সহায়তা দেয়া এবং বিদেশ থেকে ফেরা শ্রমিকদের জন্য ঋণনির্ভর বিনিয়োগের স্কিম গ্রহণ করার মতো বেশকিছু সুপারিশ করেছে বিল্ড।

  • শেয়ার করুন