প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শপিংমলের নাম হলো ইরান মল। এটি এতোটাই বড় যে পুরো মলটি ঘুরে দেখতে আপনার প্রায় সপ্তাহ খানেক সময় লেগে যাবে। শপিংমলটি তৈরি হয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছাকাছি সবচেয়ে বড় দুটি হাইওয়ের মাঝে। ফলে খুব সহজেই যে কোনো একটি হাইওয়ে ব্যবহার করে শপিং মলে প্রবেশ করা সম্ভব।
এটির ভেতরের ও বাইরের কাঠামো অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন রাজপ্রাসাদ। তাই এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। কেনাকাটা ও শপিংমলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা অন্যান্য দেশ থেকেও এখানে আসেন। এর সৌন্দর্যের কাঠামো ইরানের ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে।
শপিংমলের কেন্দ্রীয় স্থানে তৈরি হয়েছে মহান গার্ডেন নামের একটি দৃষ্টিনন্দন বাগিচা। ভেতরের দিকে প্রবেশ করলে চোখ পড়বে দিদার গার্ডেন নামের আরো একটি বাগান। সেখানে কৃত্রিম ঝর্ণাধারা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি লেক। ইরান মলে ৬৫ হাজারেরও বেশি বইয়ের সমাহার নিয়ে রয়েছে একটি বুক গার্ডেন। এই বুক গার্ডেনে ইরানের প্রায় সব ধরনের বই পাওয়া যায়।
বুক গার্ডেনে পড়েই রয়েছে ট্র্যাডিশনাল বাজার। ইরানের দামি মার্বেল পাথর দিয়ে এই ট্র্যাডিশনাল বাজারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এটি এতোটাই দৃষ্টিনন্দন যে, পৃথিবীর যেকোনো মনোরম স্থাপত্যকলার সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে।
এই শপিংমলে আরো রয়েছে মিরর মল, এটার সৌন্দর্য অবাক করে দেয়ার মতো। এর মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত পুরোটাই কাঁচ দিয়ে সুসজ্জিত। এখানে প্রফেট মোহাম্মদ মস্ক নামের একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইরানি মার্বেল পাথর। মসজিদের দেয়ালে ইরানি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা আছে আরবি আয়াত।
মূলত শপিংমলে আসা মানুষদের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছে এটি। এছাড়া এখানে ২০ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাও রয়েছে। শপিংমলে বর্তমানে সাতশটির বেশি স্টোর চালু আছে। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে স্টোরের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে শপিংমলের ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মরত রয়েছেন।
সম্প্রসারিত হলে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এখানে। ইরান মল তৈরি হওয়ার আগেই ইরানে তেমন আকর্ষণীয় কোনো শপিংমল ছিল না। যার কারণে দেশের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ইরানিরা কেনাকাটার জন্য চলে যেতেন অন্য দেশে। এর ফলে দেশ থেকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার চলে যেত বিদেশে।
তৎকালীন ইরান সরকার ভেবে দেখলেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশের অর্থ দেশেই রাখা প্রয়োজন। এজন্য ২০১৩ সালের শেষ দিকে এসে ইরান সরকার দৃষ্টিনন্দন শপিং মল তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া। যাতে দেশের জনগণ নিজের দেশেই শপিং করার জন্য আকৃষ্ট হয়।
শপিং মলের নকশা প্রণয়ন ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কার্য সম্পাদন করতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। পরের বছর ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শপিংমল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ইরান মল। ইরান মলের আয়তন প্রায় ১৯ লাখ ৫০ হাজার বর্গ মিটার। যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্কের মোট আয়তনের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বড়।
শপিংমলের নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে কয়েক বছরের মধ্যে শপিং মলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে আরো ৫০ হাজার মিটারেরও বেশি জায়গা। তখন মলটির মোট আয়তন হবে দুই মিলিয়ন বর্গ মিটার।