২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,রাত ৮:২১

শিরোনাম
কয়রায় প্রতারণা করে বয়োবৃদ্ধ মহিলার বয়স্ক ভাতার টাকা উত্তোলন  আজ তারেক রহমানের জন্মদিন দুদকের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে স্লুইস গেটের কাজ দেয়ার পয়তারা কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে নবাগত অফিসার ইনচার্জ ইমদাদুল হকের মতবিনিময় কয়রায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে র ্যালী ও আলােচনা সভা কয়রায় মিথ্যা মামলা দি‌য়ে হয়রা‌নি করার প্রতিবা‌দে সংবাদ স‌ম্মেলন কয়রায় অজগার সাপ উদ্ধার পরে সুন্দরবনে অবমুক্তি কয়রায় যুব দিবসের আলোচনা সভায় তোপের মুখে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম কয়রায় জাতীয় স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা

বদলে যাচ্ছে রাশিয়ার ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার বিন্যাস

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২১

  • শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ নীরবে বদলে যাচ্ছে রাশিয়ার ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার বিন্যাস! আশা করা হচ্ছে – খুব শীঘ্রই ২০%-এ উন্নীত হবে রাশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা। প্রয়োজন উলামায়ে কিরাম , মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও মুসলিম সংস্থাগুলোর আন্তরিক দৃষ্টি।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী মুসলিম জনসংখ্যার দেশটির নাম রাশিয়া। রাশিয়ার মোট ১৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলিম। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মুসলিম জনবিন্যাসের চরিত্রের সাথে রাশিয়ার একটা বড় রকমের মৌলিক পার্থক্য আছে। ইউরোপের সবকটি দেশেই মুসলিমরা মূলতঃ হয় অভিবাসী , না হয় অভিবাসী বংশোদ্ভূত। সেখানে রাশিয়ান মুসলমানরা হলো মূলতঃ রাশিয়ান আদিবাসী।

রাশিয়ার মুসলমানদের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি রাশিয়ার আদিবাসী মুসলিম। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে তাতারস্থান , দাগেস্তান , চেচনিয়া , ইঙ্গুশেটিয়া , বাশকোস্তোস্তান ও উত্তর ককেশাস প্রজাতন্ত্রে। রাশিয়ার মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঋণাত্মক। প্রতিটি রুশ নারী গড়ে মাত্র ১.৪ টি সন্তান জন্ম দেন। রাজধানী মস্কোর অবস্থা আরো ভয়াবহ।

মস্কোতে প্রতিটি রুশ নারী গড়ে ১.১ টি শিশু জন্ম দেন। প্রতিটি রুশ মুসলিম নারী গড়ে ২.১ টি সন্তান জন্ম দেন , আর তাতার রুশ মুসলিম নারীরা গড়ে ৬ টি সন্তান জন্ম দেন। আর চেচেন , ইঙ্গুশ মুসলিম নারী গড়ে ১০টি শিশু জন্ম দেন। রুশদের মধ্যে বিবাহের হার ব্যাপক কম এবং ডিভোর্সের হার বেশি। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি এলকোহল কনজাম্পশনের দেশ হিসেবে রাশিয়াতে এলকোহল জনিত অসুখে মৃত্যুর হারও বেশি। আরেকটি বিষয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো (উজবেকিস্তান , কাজাখাস্তান , তুর্কমেনিস্তান) থেকে মুসলিমরা কাজের জন্য রাশিয়াতে অভিবাসী হচ্ছে। রাশিয়ান অর্থোডক্স খ্রীস্টানরাও ইসলাম গ্রহণ করছে। স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অভিমত – যেভাবে চলছে তাতে ২০৩৫-২০৪০ সাল নাগাদ রাশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে।

রাশিয়ায় ইসলামের ইতিহাসঃ সপ্তম শতাব্দীতে রাশিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছিলো। প্রথম মুসলিম প্রবেশ হয়েছিলো “ডারবেন্ট” শহরে। ডারবেন্ট শহরটি দাগেস্তান প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমান রাশিয়ার রাজ্য “ভলগা বুলগেরিয়া”-য় ৯২২ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষনা করা হয়েছিল। রুশ মুসলিমদের ইতিহাস রাশিয়ায় প্রায় ১১০০ বছরের। বর্তমান রাশিয়ার একটা অংশে (ভলগা বুলগেরিয়া, ক্রিমিয়া, তাতার) মুসলিম শাসন ছিলো।

বর্তমান রাশিয়ায় মুসলমানদের অবস্থাঃ
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ায় এখন পূর্ণমাত্রায় সকল ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিরাজ করছে। রাজধানী মস্কোতেই প্রায় ২৫-৩৫ লাখের মতো মুসলিমের বসবাস। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায় মসজিদ ছিলো ৩০০টি , বর্তমানে রাশিয়ায় ৮ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে। মসজিদ নির্মাণে রাশিয়ান সরকার কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না।

১৯৯১-তে রাশিয়ায় কোন মাদ্রাসা ছিলো না। বর্তমান রাশিয়ায় ৫০-৬০টি মাদ্রাসায় কম করে হলেও ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়ছে। ১৯৯১ সালে রাশিয়া থেকে হজ্জ্ব যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ৪০। এটা এখন ২০ হাজারেরও বেশি। বর্তমানে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার জন্য হাজী কোটা বাড়ানোর জন্য সৌদি আরব সরকারকে অনুরোধ করেছে। রাশিয়ার ১৮২টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ টি মুসলিম আদিবাসী রয়েছে।

ঠিক এই মূহুর্তে কি করা উচিত?-
১) মুসলিম দেশগুলোর উচিত রাশিয়ার সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চোখ দিয়ে রাশিয়াকে দেখা পরিহার করতে হবে। রাশিয়াকে দেখতে হবে মুসলিম বিশ্বের সাথে রাশিয়ার অভিন্ন দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ ও রুশ মুসলিমদের বৃহত্তর কল্যাণের অ্যাঙ্গেল থেকে।

২) কোনভাবেই রাশিয়ায় যাতে জঙ্গীবাদী সশস্ত্র তৎপরতা সুযোগ করতে না পারে সেজন্য মুসলিম বিশ্বকে সজাগ থাকতে হবে এবং রাশিয়াকে সহযোগিতা করতে হবে।

৩) রাজনৈতিক তৎপরতা নয় বরং শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে এগিয়ে নিতে হবে রুশ মুসলিমদের মধ্যে।

৪) রাশিয়ার ভৌগলিক অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই রাশিয়ার মূল স্রোতধারায় রুশ মুসলিমদের অবদান বাড়াতে হবে।

৫) রুশ মুসলিম প্রদেশগুলোর স্বাধীনতা আন্দোলন ফোকাস হওয়া উচিত না। কারণ এতে মুসলিম প্রদেশগুলো গণহত্যার শিকার হতে পারে, সংকুচিত হয়ে যেতে পারে রাশিয়াতে মুসলিম ইনফ্ল্যাক্স, হয়তো বা রাশিয়ান সরকার তখন মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতাও খর্ব করতে পারে, আর মুসলিম প্রদেশগুলো যদি স্বাধীন হয়েও যায় , তবে মূল রাশিয়ায় মুসলিম প্রভাব বাড়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

রাশিয়াতে ঐতিহাসিকভাবেই নন-রাশিয়ান
ইউরোপীয়রা সমাদৃত বা আকাঙ্ক্ষিত না। কিন্তু রুশ মুসলিমরা সেখানে এখন খুব সহজেই বিচরণ করতে পারছেন। এখানে রুশ মুসলিমদের যোগ্যতা ও বিচক্ষণতাই মূল ফ্যাক্টর। আর ঋণাত্মক জনসংখ্যার কারণে মূল রাশিয়াকে রুশ মুসলিম জনসংখ্যার উপরেই হয়তো নির্ভর করতে হবে।

  • শেয়ার করুন