২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ৯:৫৬

করোনা টেস্টের ফি আত্মসাত মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

খুলনায় কোভিড টেস্টের ফির প্রায় ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। খুলনার সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশ কুমার দাশ এ মামলার আসামি হচ্ছেন।

এদিকে মঙ্গলবার খুলনা সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রকাশের পরিবারকে আরও একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে না আসার কারণ ব্যাখ্যাসহ অফিসে যোগদানের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর থেকে প্রকাশ তার কর্মস্থল থেকে চলে যায়। এরপর তার মোবাইল বন্ধ করে রাখে। পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান সিভিল সার্জন অফিস।

২০২০ সালের ২ জুলাইয়ের পর থেকে সদর হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য সাধারণ মানুষ ও বিদেশগামীদের কাছ থেকে যে ফি আদায় করা হয়েছে তার বড় একটি অংক প্রকাশ রাজস্ব খাতে জমা দেয়নি; যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, সিভিল সার্জন অফিসের ৫ সদস্যের একটি টিম যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি রাজস্ব খাতে টাকা জমা না পড়ার প্রমাণ পায়। এ বিষয়ে সোমবার রাত ১১টার পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি দুদককে অবহিত করা হয়।

দুদকের সূত্র জানায়, থানা থেকে কাগজপত্র পেয়েছি। প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ঢাকায় অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমতি মিললেই মামলা করা হবে।

সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, প্রকাশের পরিবারকে আজও একটি নোটিশ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করবে। এছাড়া পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে যেন প্রকাশ দেশ ত্যাগ করতে না পারে।

উল্লেখ্য, সদর হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য সাধারণ মানুষদের ৩০০ ও ৫০০ টাকা এবং বিদেশগামীদের সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করোনা টেস্টের জন্য নেওয়া হতো। এসব টেস্টের টাকা সংগ্রহ করে চালানের মাধ্যমে সিভিল সার্জন অফিসে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশ কুমারের।

সেই মোতাবেক প্রকাশ প্রতিদিনই চালানের মাধ্যমে কোভিড টেস্টের টাকা জমা দিয়ে আসছিল। কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার সঙ্গে টেস্টের সামঞ্জস্য না হওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয় সিভিল সার্জন অফিসের। এর আগের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ লিখিতভাবে প্রকাশের কাছে কোভিড টেস্টের টাকার হিসাব চাইলে প্রকাশ সেটা দেয়নি।

এরপর বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ গত বছরে খুলনায় যোগদানের পর থেকে প্রকাশের কাছে হিসাব চেয়ে কয়েক দফা লিখিত আকারে চাইলেও গুরুত্ব দেয়নি প্রকাশ। প্রায় ৫-৬টি চিঠি লিখিত আকারে প্রকাশকে দেওয়ার পর গত ২৬ জুলাই সে হিসাব দেওয়ার জন্য ১ মাস সময় চেয়ে উত্তর দেন। কিন্তু এতে রাজি না হয়ে সিভিল সার্জন তাকে ১৫ দিনের মধ্যেই হিসাব দিতে বলেন। কিন্তু তাতে গড়িমসি শুরু করে প্রকাশ।

একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে সিভিল সার্জন নিজেকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে কোভিড টেস্টের ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার গড়মিল পায়। এরপর প্রকাশকে এই টাকা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য বলা হলে সে টাকা দিতেও স্বীকার হয়। তবে টাকা পরিশোধের জন্য সময় দাবি করেন।

সিভিল সার্জন প্রকাশকে কোনো সময় না দিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর শোকজ করেন। পরবর্তীতে প্রকাশ গত ২৩ সেপ্টেম্বর তার অফিসের কর্মচারীদের নিয়ে পুনরায় হিসাব যাচাই-বাছাই করা শুরু করেন।

সিভিল সার্জন বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে প্রকাশ তার সহকর্মীদের জানায়- তার দুসম্পর্কের আত্মীয় মারা গেছেন। এই বলে তিনি অফিস ত্যাগ করেন। এখনো তার সন্ধান মেলেনি।

তিনি আরও বলেন, তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই।

প্রকাশ যশোরের বাঘারপাড়া এলাকার সুরেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে। তিনি নগরীর মুজগুন্নি এলাকায় বসবাস করতেন। তার স্ত্রী মাধবী শেখ আবু নাসের হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

  • শেয়ার করুন