২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,দুপুর ১:৩৬

কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন; আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩

  • শেয়ার করুন

 

কয়রা প্রতিনিধিঃ খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে ধসে পড়ে।

বেড়িবাঁধ ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাঁধ–সংলগ্ন ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদীনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় দশ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ভাঙন রোধে অবিলম্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেয়া হলে প্রায় দুই হাজার একর আমন ফসলের খেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদীর লোনা পানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা বেড়ীবাঁধে হটাৎ ফাটল ও ধস নিতে দেখে। সহায়-সম্পত্তির ক্ষতির আশংকায় এলাকার কিছু মানুষ ওই রাতেই বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করে। তবে আজ ভোরে ভাঙনরোধে পাউবোর দেওয়া পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খণ্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা দুখিরাম মন্ডল বলেন, গতরাত থেকেই মাটি-বালু ভর্তি বস্তা ধসে যাওয়া জায়গায় ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তবে সকাল হতেই ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কি হবে বলা যাচ্ছে না।

আজ (সোমবার) সকালে বেড়ীবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, বাঁধের যে স্থান ভেঙে গেছে, এর দু’পাশের মাটি সরে গিয়ে বালু বেরিয়ে গেছে। ওই বালু নদীর ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে। ধসে যাওয়া স্থানে সংস্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ পাশ থেকে মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন। আবার কেউ বাঁধের ঢাল থেকে জিও ব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাঁধের স্থানে দিচ্ছেন।

এ সময় ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু মুসা ও আসলাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র দুই বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ এরই মধ্যে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় ওপরে এবং বাঁধের দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে ধসে গেছে।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভেঙে গিয়েছিল। সে সময় পাউবো ওই বাঁধটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে সঠিক তদারকি না থাকায় কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি নির্মাণ করে। ফলে দুই বছর না যেতেই বাঁধটি ভাঙনের শঙ্কার মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে ভাঙন কবলিত স্থানে নদের পানিতে ঘুর্ণীয়মান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে, সে জন্য নদীর তীরে পাকা ব্লক দেওয়া দরকার।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাঙন কবলিত স্থানে গিয়েছিলাম, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে পানি প্রবেশ ঠেকাতে পারলেও ভাঙন রোধে দ্রুত পাউবোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় নদীর তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খুলনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, কয়রার এসব বেড়ীবাঁধ এতদিন সাতক্ষীরা জেলার আওতাধীন ছিল। দুই বছর আগে ২ নম্বর কয়রা এলাকার বেড়ীবাঁধটি জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরা পাউবো নির্মান করেছিল। আমরা খুলনা পাউবো সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছি। তবে প্রশাসনিক জটিলতা এখনো কাটেনি। আমি আজ ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে যাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙনকবলিত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।

  • শেয়ার করুন