২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার,রাত ৪:৩৬

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা অনুচিত ও অগ্রহণযোগ্য: বিভিন্ন অঙ্গনের ২২ নারী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দ্রুত বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নারী নেত্রী, লেখিকা, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন অঙ্গনের নেতৃস্থানীয় ২২ নারী।
বুধবারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি বাংলাদেশের একটি বড় দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
আরও বলা হয়, বর্তমানে তিনি কয়েকটি মামলার আসামি এবং দণ্ডপ্রাপ্ত। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে তার মোকাবিলা তিনি আইনিভাবে করছেন। তিনি ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৫ মাস কারাবাস খেটেছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। তার শারীরিক নানা জটিলতার কারণে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক কারণে সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে ছয় মাস করে করে বাড়িতে রেখে দেশের ভেতর চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছেন।

বর্তমান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় বেশ কয়েক ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, যার সর্বাঙ্গীণ চিকিৎসা এই দেশে সম্ভব নয় বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। সরকারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুযায়ী ‘অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন’ হিসাবে গণ্য হয়। নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার ‘ব্যক্তির অন্তর্গত মর্যাদা’ থেকে উদ্ভূত বলে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার বয়স ৭৭ বছর। মেডিকেল বোর্ডের মতে সর্বশেষ শারীরিক জটিলতা হচ্ছে তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন এবং এ পর্যন্ত তিন দফায় রক্তক্ষরণ হয়েছে।
তৃতীয়বার রক্তক্ষরণ অনেক বেশি ছিল। লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৭০ শতাংশ। চিকিৎসকদের মতে খালেদা জিয়ার লিভারে পরিপাকীয় চাপ কমাতে বাইপাস প্রক্রিয়া সঞ্চালন নালি তৈরি করতে হবে। এটি টিপস (টিআইপিএস—ট্রান্সজাগিউলার ইন্ট্রাহিপাটিক পোর্টো সিস্টেমিক শান্ট)। পদ্ধতিতে করা হয় যার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল বাংলাদেশে নাই। বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা হিসাবে দেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল থাকা অবস্থায় তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করাই সর্বাপেক্ষা কাম্য ।

তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে বিদেশে হলেও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও বিধান অনুযায়ী কোন রাষ্ট্রেরই বাধা দেওয়া কিম্বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি অনুচিত ও অগ্রহণযোগ্য ।
সময় খুব বেশি নেই, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী প্রযুক্তিগত এবং ব্যবস্থাপনা দিক থেকে যে দেশে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব সেখানেই বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে পাঠানো হোক। দ্রুত বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, শিশু বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রী ডা. নায়লা জামান খান, নারী নেত্রী শিরীন প হক, ফরিদা আখতার, দিলশান পারুল, সামিয়া আফরিন, পরিবেশ আন্দোলন নেত্রী শারমিন মোরশেদ, নারী নেত্রী ও আইনজীবী সুলতানা আখতার রুবী, শিক্ষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক সায়েদা গুলরুখ, নারী আন্দোলন কর্মী সাইদা আখতার, নাজমুন নাহার, শ্রমিক আন্দোলন কর্মী সীমা দাস সীমু, উন্নয়ন কর্মী ময়মুনা আখতার, রাজনৈতিক নেত্রী বহ্নিশিখা জামালী, আইনজীবী ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক মাহা মীর্জা, লেখক মীনা মাশরাফী, রেহনুমা আহমেদ, আঞ্জুমানারা শিউলি, সমাজ কর্মী সামসুন নাহার, সেলিনা রশীদ ও রুবিনা রহমান।

  • শেয়ার করুন