৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সকাল ৭:৩০

খুলনায় বছরের পর বছর জুটমিল বন্ধ, শ্রমিকদের পাওনা শত কোটি টাকা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি জুট মিল বছরের পর বছর বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ভিন্নখাতে ব্যবহার করতে এই কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন মিল মালিকরা। শ্রমিকদের দাবি, ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ বা মিলগুলোকে চালু করার আদৌ কোনো পরিকল্পনাও তাদের নেই। এদিকে মিল মালিকদের কাছে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ১শ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

জানা যায় খুলনা অঞ্চলে বেসরকারি সোনালী জুট মিলস, এ্যাযাক্স জুট মিলস, মহসেন জুট মিলস, শিরোমণি ট্রান্সওশেন ফাইবার্স প্রোসেসার্স লিমিটেড, জুট স্পিনার্স, আফিল, এ সকল জুট মিলের মালিকদের কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। সোনালী জুট মিলের শ্রমিক কামাল মিয়া বলেন- মিলে মজুরির প্রায় আড়াই লাখ টাকা বকেয়া। মিল বন্ধ, টাকা দেয়না তাই রিস্কা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। জুট স্পিনার্সের শ্রমিক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, মিল চালু ও বকেয়া পাওনার দাবিতে বেশ কিছুদিন আন্দোলন করতে করতে হঠাৎ করেই সিবিএ নেতারা আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছে। মিলে কাজ করার আশা আমরা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমরা শুধু বকেয়া পাওনা টাকা চাই।

আটরা শিল্প এলাকার আফিল জুট মিলটি ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বন্দ হয়, মিলটিতে ৯৪৮ জন স্থায়ি ও ৪৯৬ জন বদলি শ্রমিক ছিলো, বর্তমানে  মিল মালিকের কাছে শ্রমিকদের প্রায় ১৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আফিল জুট মিলের শ্রমিক নজরুল মোড়ল বলেন, মিল চালু বা বকেয়া পাওনার কোনো সম্ভবনা না দেখে গরু বিক্রি করে একটি ভ্যান গাড়ি কিনে সেটা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। জানা যায় ৫ টি মিলের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক পরিবার মানবেতর দিনযাপন করছে। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

মহসেন জুট মিল ১৯৭২ সালে সরকারিকরণ হলেও ১৯৮৩ সালে তা পুনরায় ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ১৭ জুলাই মিলের স্থায়ী এবং অস্থায়ী ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। মিলটি রূপালী ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলো প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

জুট স্পিনার্স মিল ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। ২০১৬ সালে মিলের ১৭শ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে নোটিশ ছাড়াই বন্ধ করে দেয় মিলটির মালিক মোঃ সামছুজ্জোহা। এখানে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা প্রায় ৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের কাছে মিলটির প্রায় ২৯ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

মীরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলে বন্ধকৃত অ্যাযাক্স জুট মিলে দুই হাজার শ্রমিক কাজ করত। সব মিলিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা ৩২ কোটি টাকা। মিলটি সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ১শ” কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

খুলনা অঞ্চলে বেসরকারি জুটমিলগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সোনালী জুট মিলস। মিলটিতে স্বায়ী ও বদলি মিলে প্রায় ৪৭০০ শ্রমিক কাজ করত। বর্তমানে মিল মালিকের কাছে শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে উত্তরা ও সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋন।

বেসরকারি পাট, সূতা, বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মাচরী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল খান বলেন, বেসরকারি জুট মিলের মালিকরা ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মিলগুলোকে বন্ধ করে রেখেছে। পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করায় হাজার হাজার শ্রমিকদের পরিবার মানবেতর দিনযাপন করছে। একাধিক বার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ত্রি-পক্ষিয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু ১টি সিদ্ধান্তও মালিক পক্ষ মানেনি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান হবেনা বলে তিনি মনে করেন। খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন বেসরকারী জুট মিলের মালিকেরা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে মিল চালু করার কথা বলে মোটা অংকের লোন নিয়ে মিল না চালিয়ে অন্যখাতে অর্থব্যায় করছে সে সকল মালিকদের ব্যাপারে খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অনেক মিল মালিকের বিরুদ্ধে আমি নিজে বাদি হয়ে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেছি।

  • শেয়ার করুন