২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার,ভোর ৫:০৭

চরভদ্রাসনের আতংক সন্ত্রাসী জিন্নাহ মন্ডল ও রুবেল মাহমুদ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩

  • শেয়ার করুন

 

 

নিজস্ব সংবাদদাতা :- নেই কোন বৈধ ব্যবসা কিন্তু শত কোটি টাকার মালিক। আর এর পেছনে রয়েছে, হুন্ডি ব্যবসা, ভূমি দস্যুতা, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানি ও চঁাদাবাজি। আর এসব করতে এখন জিন্নাহ মন্ডল গড়ে তুলেছেন এক ভয়ংকর সন্ত্রাসী বাহিনী। যারা বিদেশী ও দেশী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যখন তখন যার তার ওপর হামলা নির্যাতন করছে।
যেভাবে শুরু:
দরিদ্র পরিবারের সন্তান হাকিম মন্ডলের ছেলে জিন্নাহ মন্ডল বেশ কয়েক বছর আগে কাতারে গাড়ির গ্যারেজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান। চরভদ্রাসন ও সদরপুরের অসংখ্য মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরি করেন সেই কারণে কিছুদিন পর সেখান থেকেই প্রথমে চরভদ্রাসনে হুন্ডি ব্যবসা শুরু করেন। চরভদ্রাসনে সে প্রথমে তার বাবা হাকিম মন্ডল ও ভাই আইয়ুব মন্ডলকে দিয়ে হুন্ডি ব্যবসা দেখভাল শুরু করান। এখন তার সেই হুন্ডি ব্যবসা শুধু সৌদি আরবেই নয় মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশে। এখন প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয় জিন্নাহ মন্ডলের হুন্ডির ব্যবসার মাধ্যমে। যার কারণে বৈশ্বিক এ সংকটের সময়ও দেশ হারাচ্ছে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক রেমিটেন্স।
মানব পাচার:
হুন্ডি ব্যবসার সাথে জিন্নাহ মন্ডল শুরু করেন চরভদ্রাসন ও আশেপাশের এলাকা থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে অবৈধভাবে মানব পাচার শুরু করেন সে। যার মধ্যে অনেক নারীকেও পাচার করা হয়। এরপর মানব পাচারের গন্ডি বাড়তে জিন্নাহ মন্ডলের ব্যবসায় যুক্ত হয় তারই আত্মিয় সদরপুরের মান্নান শেখের ছেলে শেখ রুবেল মাহমুদ। শুরু করে অবৈধ পথে ইউরোপে মানব পাচার। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে শুরুতেই কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা অগ্রিম নেয় সে। ইউরোপে মানব পাচার করতে সবাইকে সরাসরি আকাশ পথেই ইউরোপে নেওয়ার আশ্বাস দেন জিন্নাহ ও রুবেল। কিন্তু এ চক্রের মাধ্যমে যারাই ভাগ্য ফেরাতে ইউরোপ যেতে চেয়েছেন তাদেরকে ঢাকা থেকে আকাশ পথে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নেওয়া হতো। তারপর অবৈধ পথে যাত্রা শুরু হতো ইউরোপের পথে। আর এ কারণেই অনেকে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। করছেন মানবেতর জীবন যাপন। তবে কাউকেই আর টাকা ফেরত দেয়নি জিন্নাহ কিংবা রুবেল। এমন একজন ভুক্তভোগীর বাবা এ প্রতিবেদককে বলেন, মাঠের সব জমি বিক্রি করে রুবেল মাহমুদের মাধ্যমে মাধ্যমে জিন্নাহ মন্ডল কে ২৫ লাখ টাকা দেন তিনি। তার ছেলেকে জিন্নাহ আকাশ পথে স্পেনে নিয়ে যাবে বলে বলেন এবং সেজন্য সর্বমোট ৪০ লাখ টাকায় দফারফা হয়। বাকি ১৫ লাখ টাকা স্পেনে পৌছানোর পর দেওয়ার কথা ছিলো। ঢাকা থেকে আকাশ পথে তার সেই ছেলেকে স্পেনে না নিয়ে নেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে আর আকাশ পথে নয় চোরা পথে তার ছেলেকে নিতে চাইলে সেখানে সে প্রতিবাদ করলে অমানুসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়। এরপর তার ছেলে সেখানে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে ফেলে রেখে যায় জিন্নাহ মন্ডলের লোক। পরে অন্য একজনের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি হন তার ছেলে। বেশকিছুদিন তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হাসপাতালের আইসিইউয়েও থাকতে হয়। পরে পরিবার থেকে আবার অনেক কষ্টে ধার দেনা করে বসবাসের বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে তাকে দেশে আনা হয়েছে। এ ঘটনার পর জিন্নাহ মন্ডলের সাথে ভুক্তভোগির পরিবার যোগাযোগ করলে জীবন নাশের হুমকি দেয় জিন্নাহ মন্ডল, রুবেল শেখ সহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর আর কখনোই তিনি ওই টাকা নিয়ে কথা বলেন নি। ভুক্তভোগী ওই পিতা বলেন, শুধু তিনিই নন তারমতো আরো অনেকেই জিন্নাহ মন্ডলকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন কিন্তু জিন্নাহ মন্ডলের সন্ত্রাসী বাহিনী ও অবৈধ অর্থের জোড়ে সবাই মুখবুজে সব সহ্য করে নিয়েছেন।সন্ত্রাসী বাহিনী:
মানব পাচারের ব্যবসা শুরুর পর জিন্নাহ মন্ডল, রুবেল মাহমুদ চরভদ্রাসন, সদরপুরে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। যেন মানব পাচারের কারণে ভুক্তভুগীদের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যায় এবং অসহায়দের ভুমি দখল করা যায়। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীতে আকৃষ্ট করতে নিজ বংশ ও এলাকার উঠতি বয়সী তরুণদের টাকা মাদক দেওয়া শুরু করে তারা। সেই সাথে সেই সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে দেশী বিদেশী অস্ত্রও দিয়েছেন এই জিন্নাহ ও রুবেল। এখন তারা এতোটাই বেপড়োয়া যে চরভদ্রাসন বাজারে দোকান মালিক এবং ভাড়াটেদের কাছে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে। এবং নিয়মিত চঁাদা না দিলে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। সম্প্রতি এমন এক চঁাদা চাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরভদ্রাসন বাজার ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলে জিন্নাহ ও রুবেলের উপস্থিতিতে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। সেসময় জিন্নাহদের সন্ত্রাসী বাহিনীর একজন ব্যবসায়ীদের আঘাত করতে গেলে সে সরে যায় এবং সেই আঘাত ভুল করে লাগে জিন্নাহ-রুবেলের সন্ত্রাসী বাহিনীর আরেক সদস্যের তাতে সে আহত হয়। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধী ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে ভয়ংকর জিন্নাহ ও রুবেল। ব্যবসায়রা বলেন, একই সাথে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করা ব্যবসায়ীদের নিয়মিত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা।
ভুমি দস্যুতা:
হুন্ডি ব্যবসা, মানব পাচার, সন্ত্রাসী বাহিনী গঠণ করে থেমে থাকে নি জিন্নাহ ও রুবেল। সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে শুরু করে অসহায়দের জমি দখল। শুরুতে সে তার বাড়ি ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের হাজিডাঙ্গী এলাকায় শুরু করেন জমি দখল। অবৈধ ভাবে দখল করা জমি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জমির মালিকদের ভয় দেখাতে নিয়মিত সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা পাহাড়া ও মহড়া দেয় জিন্নাহ-রুবেলের সন্ত্রাসী বাহিনী। এরপর জিন্নাহ ও রুবেলের চোখ পড়ে চরভদ্রাসনের বাজারের জমিতে। বাজারের জমির মালিক কিন্তু এলাকায় থাকে না এমন ও অসহায়দের টার্গেট শুরু করে তারা। তারপর ভুয়া জাল দলিল তৈরি করে অবৈধভাবে জমি দখল করা শুরু করে। বেশ কয়েক বছর আগে চরভদ্রাসন বাজারের গার্লস স্কুল রেডে জমি দখল করে কোন প্লান না পাস করিয়ে রাতারাতি পাকা বিল্ডিং তৈরি করেছেন জিন্নাহ মন্ডল।

এঘটনার পর আরো বেপড়োয়া হয়ে ওঠে সে। বাজারের উপর অবৈধ বাড়িতে থাকার প্রেক্ষিতে বাজারের অন্যান্য জমি দখলে মরিয়া জিন্নাহ রুবেলরা। আর জিন্নাহ মন্ডলের দখলকৃত জমিতে করা বাড়ি গার্লস স্কুল রোডে হওয়ায় সেই বাড়ির সামনে থেকে স্কুলগামী ছাত্রীদের নিয়মিত উত্যাক্তও করে জিন্নাহ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এ কারণে স্কুল পড়–য়া ছাত্রীদের অনেকেই সেই সড় ব্যবহার না করে অনেক ঘুরে স্কুলে যায়। আবার অনেক ছাত্রীকে তার পরিবার গার্লস স্কুল থেকে সরিয়ে অন্যত্র ভর্তি করিয়েছেন।
মাদক ব্যবসা-স্বর্ণ চোরাচালান:
সন্ত্রাসী দলের সদস্যদের মাঝে মাদক ছড়াতে এবং আধিপত্য বজায় রাখতে বেশ কয়েকবছর ধরে চরভদ্রাসন ও আশে পাশের মাদক ব্যবসায় হাত বাড়ায় জিন্নাহ মন্ডল। পদ্মা পাড়ে নিজেদের আদি নিবাস থাকায় বিভিন্ন উপায়ে ইয়াবা প্রবেশ করায় চরভদ্রাসনে। নিয়মিত অর্থলগ্নির মাধ্যমে সেই মাদক ব্যবসা তিনি দেখাশোনা করান তার ক্যাডারদের দিয়ে। শুধু মাদক ব্যবসায়ই নয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণ চোরাচালান করেও বিপুল অর্থ আয় করছেন জিন্নাহ মন্ডল। সম্প্রতি চরভদ্রাসনের লোকের মুখে মুখে রয়েছে তার অবৈধ স্বর্ণ ব্যবসার কথা।
জিন্নাহ ও রুবেলের সন্ত্রাসী বাহিনীর অপকর্মের কারণে ভুক্তভুগীরা জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয় পান মামলা করতে। তাই ভুক্তোভুগীরা বলেন, জিন্নাহ-রুবেলের সন্ত্রাসী বাহিনী এতটাই ভয়ংকর যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করার সাহস পায় না। তবে আইন-শৃংখলা বাহিনী যদি স্বপ্রনোদিতভাবে সঠিক তদন্ত করে জিন্নাহ-রুবেলকে গ্রেফতার করে তবে সন্ত্রাস, অর্থ পাচার, অবৈধভাবে জমি দখল মাদক ব্যবসা সহ সকল অপকর্ম বেরিয়ে আসবে। আর তখন স্বস্তি আসবে চরভদ্রাসন সহ জিন্নাহ রুবেলের কারণে ভুক্তভোগীদের। সেই সাথে তখন সবাই মুখ খোলার সাহস পাবে ভয়ংকর এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জিন্নাহ মন্ডল ও রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর ফোন কেটে দেন।

  • শেয়ার করুন