প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২২
জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় দেখতে চায় অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সদস্য দেশগুলো। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা দিতেও প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ওইসিডিভুক্ত ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা ইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদলের পক্ষে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, দেশের গণতন্ত্র আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতে সহায়ক অবস্থা তৈরি করতে আমাদের সদস্য দেশগুলো নির্বাচন কমিশনকে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও শাণিত করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করতে চায় ওইসিডি সদস্য দেশগুলো। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে করা এক পোস্টে বৃটিশ হাইকমিশনার লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে গঠনমূলক বৈঠকের জন্য ওইসিডি মিশন প্রধানদের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি। সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য অত্যাবশ্যক, যুক্তরাজ্য এবং সমমনা অংশীদাররা অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে চালিয়ে যাবে। ওদিকে ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন বৃটিশ হাইকমিশনার ডিকসনের টুইটটি রিটুইট করেছেন। অন্যদিকে বিদেশিদের সহযোগিতার প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, উনারা সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। আমরা চট করেই নিজেরা কিছু বলিনি। আমরা বলেছি, আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখবো।
কোনো টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্স যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা উনাদের জানাবো।
সিইসি বলেন, উনারা এসেছেন এটা একটা ট্রেডিশন। আগেও এসেছেন তারই ধারাবাহিকতা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন-কানুন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের কার্যক্রমগুলো জানিয়েছি। উনারা সাধারণত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। সে জন্যই উনারা ইলেকশনটা যদি ইনক্লুসিভ, এক্সেপ্টেবল, ফ্রি এবং ফেয়ার হয়, তাহলে তারাও খুশি হবেন, পুরো দেশবাসী খুশি হবেন- এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ইলেকশন কমিশন হিসেবে আমাদের যা যা করণীয় আমরা করবো। উনারা প্লিজড। বলেছি ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজন হয়, আসবেন। কী ধরনের সহযোগিতা করবে, এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা বলেছি সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখবো। আমরা এখনো সহযোগিতা চাইনি। সক্ষমতা বাড়ানোর সহযোগিতা নাকি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করবে? জবাবে তিনি বলেন, এটা ইলেকশন রিলেটেড। যেটা হতে পারে ভোটার এডুকেশন বা ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয় হতে পারে। আমি তো বলেছি আমরা তাদের জানাইনি এখনো। আমরা যদি মনে করি কোনো রকম সহযোগিতা বা টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্স বা ট্রেনিং প্রয়োজন হবে, তখন তাদের জানাবো। এ জন্য নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কী ধরনের সহযোগিতা তারা দেবেন বা আমরা কী ধরনের সহযোগিতা চাইবো। তারা পর্যবেক্ষকের কথা বলেছেন, আমরা বলেছি আমাদের এদিক থেকে কোনো বাধা নেই।
তবে এ বিষয়ে ডিপ্লোমেটিক্যালি আলোচনা করে দেখতে পারেন। ফরেন অবজারভারদের বিষয়ে আপনারা ফরেন মিনিস্ট্রিতে একটু কথা বলে দেখতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্বের বিষয়ে কোনো কথা বলেছেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা তেমন কিছু বলেনি। তারাও খুব ভালো করেই জানেন, এখনো কিছু কিছু দল ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারাও বিশ্বাস করেন, আমরাও চেষ্টা করে যাবো, যেন ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন, ফ্রান্সের সহকারী রাষ্ট্রদূত গুইলাম অড্রেন ডি কেরড্রেল, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আছিম ট্রস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকোনুনজিয়াটা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনি গিয়ার্ড ভ্যান লিউয়েন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো ডি আসিস বেনিটেজ সালাস, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তোরান ও জাপানের হেড অব মিশন ইয়ামায়া হিরোয়ুকি অংশ নেন।