১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার,সন্ধ্যা ৬:০৯

ঈদে মানুষের ভোগান্তি কমাতে গনপরিবহন চালু রাখার পরামর্শ

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২১

  • শেয়ার করুন

এবারের ঈদুল আজহায় ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এখন একটাই চাওয়া, ঈদের আগে চালু করা হোক দূরপাল্লার বাস চলাচল। তারা বলছেন, সড়ক পরিবহন খাতের ৫০ লাখ শ্রমিক এই মুহূর্তে বেকার। এ অবস্থায় তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের বাড়ি যাওয়ার ভোগান্তি কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চালুর অনুমতি দেওয়া হোক।

সড়ক পরিবহন খাতের নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করা, বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রস্তাবও দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, আমাদের পরিবহন শ্রমিক আছেন ৭০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ জরুরি পণ্য পরিবহনের কাজে জ’ড়িত আছেন। বাকি ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার রয়েছেন।

আম’রা তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত দূরপাল্লার পরিবহন চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ, ঈদুল আজহায় মানুষ বাড়ি যাবে বিকল্প বাহনে। ট্রাকে, পিকআপে, মোটর সাইকেলে, মাইক্রোবাসে। বেশি অর্থ খরচ করে মানুষ বাড়ি ফিরবে। তার চেয়ে দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাস স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানোর ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।

ওসমান আলী বলেন, গাড়ি চললে পরিবহন শ্রমিকদের সংসার চলে। উপার্জনের পথ বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকছেন। এ যন্ত্র’ণা তাদের কাছে করো’না সংক্রমণের ভ’য়ের চেয়েও বেশিকিছু।

ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু রাখার পক্ষে মত তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদেরও। পু’লিশের শীর্ষ কর্মক’র্তারাও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস চালুর পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। জুনের শেষ সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তারা এ মতামত প্রকাশ করেছিলেন।

সভায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, করোনার কারণে গত ঈদ-উল-ফিতরের সময় তিন দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল। যাতে ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামমুখী না হয়। সেজন্য সড়ক ও মহাসড়কে বাধা দেওয়া হলেও ঈদের ছুটিতে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ঈদের ছুটিতে মানুষের মধ্যে নিজ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। তাই মানুষের নিরাপদে যাতায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা মহানগর পু’লিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইস’লাম বলেছেন, ঈদের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে মানুষ গাদা-গাদি করে যাতায়াত করবে। এতে সংক্রমণের হার অধিক হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস ও রেল যোগাযোগ সচল থাকলে সংক্রমণের সংখ্যা কম হতে পারে।

স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অ’তিরিক্ত পু’লিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইস’লাম বলেন, গার্মেন্টস শিল্প কারখানাগুলোর শ্রমিকদের ছুটি পর্যায়ক্রমে নির্ধারণ করলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। কারণ, ২৩৬টি গার্মেন্টস শিল্প কারখানা রয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেছেন, ঈদের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিভিন্ন যানবাহনে গাদা গাদি করে অ’তিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করে থাকে তারা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁ’কি আরও বেড়ে যেতে পারে। তিনি গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ছুটি পর্যায়ক্রমে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। গত ঈদুল ফিতরের সময় গাদাগাদি করে ফেরি পারাপারের সময় প্রচন্ড গরমে এবং চাপে পড়ে চার জন মানুষের মৃ’ত্যু হয়।

নিট গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি সেলিম ওসমান এমপি বলেছেন, গত ঈদ-উল-ফিতরের সময় শ্রমিকদের বেতন, বোনাস ও ভাতা দিতে কোন সমস্যা হয়নি। এ ঈদেও আশা করি সমস্যা হবে না। কিন্তু গত ঈদে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুই-তিন গুণ অধিক ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে তাদের।

এর ফলে এসব শ্রমজীবি মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁ’কিতে পড়েছে। তাই এবারের ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষ যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সে লক্ষ্যে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু রাখা প্রয়োজন।

  • শেয়ার করুন