১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,সকাল ১১:১০

বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২

  • শেয়ার করুন

 

গত দুই বছর করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই করে কেটেছে মানুষের। সেই ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন এমনিতে চরম সঙ্কটে। চিকিৎসা, বাসস্থান, বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোতে ব্যয় কমিয়ে ফেলেছে দেশের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও টিকা নিয়ে হয়তো করোনাভাইরাস ঠেকানো সম্ভব; কিন্তু নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে রীতিমতো অসহায় দেশবাসী। মানুষকে আয়ের বড় অংশই খরচ করতে হচ্ছে বাসা ভাড়া ও বাজারের পেছনে। আবার অনেকেই তুলনামূলক কম ভাড়ার বাসা নিয়েছেন এই বাড়তি ব্যয় মেটাতে। অনেকের সন্তানের লেখাপড়াতেও ছেদ পড়েছে।

বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নামে একটি সংস্থা রয়েছে; কিন্তু তাদের কার্যক্রমও তেমন লক্ষণীয় নয়। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে তারা ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ কতটুকু করছেন তা সর্বসাধারণের বিচার্য।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে উঠে এসেছে, দেশে খানাপিছু গড় মাসিক আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশই যায় খাদ্য কেনায়। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মাসিক মোট আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। এই খাদ্যের বেশির ভাগই চাল। দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চালের মাথাপিছু দৈনিক ভোগ ৪৭০ গ্রাম, যেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৩৬৬ গ্রাম। প্রধান খাদ্যশস্যটির মূল্যস্ফীতির বোঝাও তাদের ঘাড়ে চাপে বেশি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে না পেরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন কম দামে পণ্য পেতে টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৪৫০টি পয়েন্টে এখন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরসহ ঢাকা বিভাগে ১০১টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি হয়। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে দিনে ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৫০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা সয়াবিন তেল দুই লিটার, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি কিনতে পারেন। লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত সবাই পণ্য পান না। দুই-তিন ঘণ্টা দাঁড়ানোর পরও কেউ কেউ ফিরে যান খালি হাতে। কারণ পণ্য সীমিত।

একশ্রেণির সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে দেশে দেড় কোটি দরিদ্র বেড়েছে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায় রাখতে না পারলে দরিদ্র মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

এ ছাড়াও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে আমদানি, পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থাপনায় চাল, আটা, চিনি, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য প্রান্তিক, শ্রমজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি; বিশেষ করে করোনাকালে যাদের আয় কমে গেছে, তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে।

গ্রাম ও শহরাঞ্চলের প্রান্তিক ও শ্রমজীবী মানুষ যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, সে জন্য নিত্যপণ্যের দাম যেমন স্থিতিশীল রাখতে হবে। তেমনি তাদের আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে। এসব পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে, সেদিকে তাকিয়ে আছে মানুষ।

  • শেয়ার করুন